Type Here to Get Search Results !

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী| Rabindranath Tagore Biography in Bengali

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী| Rabindranath Tagore Biography in Bengali
Rabindranath Tagore Biography in Bengali


Table Of Content(toc)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী| Rabindranath Tagore  Biography in Bengali

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী| Rabindranath Tagore Biography in Bengali, জন্ম ও শৈশব, ছাত্রজীবন, সাহিত্যকর্মের সূচনা, ব্যক্তিজীবন, কর্মজীবন, কাব্যগ্রন্থ, নাটক, উপন্যাস...

Biography of Rabindranath Tagore| Rabindranath Tagore biography in Bengali| Bangla biography Rabindranath Tagore| full story of Rabindranath Tagore in Bengali.

জন্ম তারিখ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে সােমবার রাত ২টো ২৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে রবীন্দ্রনাথের জন্ম।
জন্মস্থানকলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুবাড়ি
পিত ও মাতা (অভিভাবক)

পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদাসুন্দরী দেবী।

দাম্পত্যসঙ্গীমৃণালিনী দেবী
পেশা (Career)কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী
উল্লেখযোগ্য রচনাগীতাঞ্জলি (১৯১০), রবীন্দ্র রচনাবলী, গোরা, ঘরে বাইরে,সােনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘কল্পনা’, ‘ক্ষণিকা’, ‘নৈবেদ্য,‘খেয়া’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’, ‘গীতালি’, ‘বলাকা’, ‘মহুয়া,‘পুনশ্চ’, ‘পত্রপুট
ছদ্মনামভানুসিংহ ঠাকুর।
 উপাধিকবিগুরু, বিশ্বকবি, গুরুদেব।
উল্লেখযোগ্য সম্মানগীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার (১৯১৩)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনী | Biography of Rabindranath Tagore.

বীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore)-ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। 

তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর উদ্দেশে শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন- “কবিগুরু তােমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নাই।” বাস্তবিকই, রবীন্দ্র- প্রতিভা এক পরম বিস্ময়ের ব্যাপার। একইসঙ্গে তিনি কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, নাট্যপরিচালক, অভিনেতা, গীতিকার, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং আরও অনেক কিছু। তার সৃষ্টিশীলতার বহু বিচিত্র ধারা কেবল দেশবাসীর নয়, বিশ্ববাসীর মনকেও প্লাবিত করেছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনী | Rabindranath Tagore Biography.

»জন্ম ও শৈশব: ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়া- সাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে সােমবার রাত ২টো ২৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে রবীন্দ্রনাথের জন্ম। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদা দেবী। পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন সেকালের বিখ্যাত ধনী ব্যক্তি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন পিতা-মাতার চোদ্দোতম সন্তান।ঠাকুর পরিবারে সাহিত্য, শিল্প ও সংগীতচর্চার যে অনুকূল আবহাওয়া ছিল,রবীন্দ্রনাথ তার মধ্যেই ধীরে ধীরে বড়াে হয়ে উঠেছিলেন। শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন। 

কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৭৩ সালে এগারো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন। প্রথমে তাঁরা আসেন শান্তিনিকেতনে। এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। 

শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ যান পাঞ্জাবেরই (অধুনা ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত) ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায়। এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন। দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জীবনী, কালিদাস রচিত ধ্রুপদি সংস্কৃত কাব্য ও নাটক এবং উপনিষদ্‌ পাঠেও উৎসাহিত করতেন। 

১৮৭৭ সালে ভারতী পত্রিকায় তরুণ রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়। এগুলি হল মাইকেল মধুসূদনের "মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা", ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী এবং "ভিখারিণী" "করুণা" নামে দুটি গল্প। এর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই কবিতাগুলি রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলির অনুকরণে "ভানুসিংহ" ভণিতায় রচিত। রবীন্দ্রনাথের "ভিখারিণী" গল্পটি (১৮৭৭) বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তথা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ কবিকাহিনী। এছাড়া এই পর্বে তিনি রচনা করেছিলেন সন্ধ্যাসংগীত (১৮৮২) কাব্যগ্রন্থটি। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর শিক্ষাজীবন| Educational life of Rabindranath Tagore.

»ছাত্রজীবন: বালক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ছাত্রজীবন শুরু হয় ‘ওরিয়েন্টাল সেমিনারি’তে। তবে রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রশান্তকুমার পালের মতে রবীন্দ্রনাথের ছাত্রজীবন আরম্ভ হয়, ক্যালকাটা ট্রেনিং একাডেমিতে। এর পরে তিনি নর্মাল স্কুল ক্যালকাটা গভর্মেন্ট পাঠশালা], বেঙ্গল অ্যাকাডেমি, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে পাঠ গ্রহণ করেন।  প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক স্কুলজীবন তাঁর ভালাে লাগত না। তাই বারেবারেই তাঁর স্কুল বদল হয়েছে। সেজন্য বারবার বিদ্যালয় পরিবর্তন করলেও বিদ্যালয়ের পড়া তিনি শেষ করে উঠতে পারেননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসমাপ্ত থাকলেও তিনি অবশ্য বাড়িতে যােগ্য গৃহশিক্ষকদের অধীনে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠগ্রহণ করেছিলেন।

চার দেয়ালের বন্ধ ঘেরাটোপের মধ্যে লেখাপড়ায় তিনি একেবারেই মন বসাতে পারতেন না। তাই বারবার স্কুল বদলেও তিনি বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করতে পারেননি। তবে এজন্য তাঁর বিদ্যাচর্চা থেমে থাকেনি। বাড়িতে গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রনাথের পড়াশােনা ভালােমতাে চলতে থাকে। ফলে ধরাবাঁধা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে, মুক্ত পরিসরে স্বাধীনভাবে চিন্তা ও কল্পনা করার অবকাশ তিনি লাভ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্বের বিকাশে এর সদর্থক প্রভাব পড়েছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ব্যক্তিগত জীবন| Personal life of Rabindranath Tagore.

১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর আঠারাে বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথকে ইংল্যান্ডে পাঠানাের ব্যবস্থা করা হয়। সেটাই তার প্রথম বিলাত যাত্রা। সেখানে ব্রাইটন ফর বয়েজ স্কুলে তাকে ভরতি করা হয়। পরের বছর ভরতি হন University College, London-45 Faculty of Arts & Laws বিভাগে। কিন্তু পিতা দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার প্রথমবার বিলাতবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা হয়েছে য়ুরােপ প্রবাসীর পত্র। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর বিবাহিত জীবন| Married life of Rabindranath Tagore.

১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে যশােরের বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণী দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় ঠাকুর বাড়িতে  ভবতারিণীর নতুন নামকরণ হয় মৃণালিনী। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের নতুন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন। 

কাদম্বরী দেবী রবীন্দ্রনাথকে যেমন স্নেহ করতেন, তেমনি তাকে সাহিত্যচর্চাতেও উৎসাহিত করতেন।রবীন্দ্রনাথ চিরকাল এই স্নেহময়ী রমণীর কথা মনে রেখেছিলেন। তার বহু রচনায় কাদম্বরী দেবীর স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। ১৮৮৪-তেই পিতার নির্দেশে রবীন্দ্রনাথকে জমিদারি দেখাশােনার ভার গ্রহণ।করতে হয়। জমিদারি দেখভালের সূত্রে তিনি বেশ কিছুকাল পদ্মাতীরবর্তী শিলাইদহ, সাজাদপুর প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাস করেন। এইসব অঞ্চলের খােলামেলা প্রকৃতি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গ তাঁর সৃষ্টিকর্মকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন ছদ্মনামের মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুর, আন্নাকালী পাকড়াশী,শ্ৰীমতী কনিষ্ঠা প্রভৃতি ছিল উল্লেখযােগ্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর কর্মজীবন| Career of Rabindranath Tagore.

সাহিত্যকর্ম ছাড়া অন্যান্য নানারকম কাজকর্মের সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথ জড়িত ছিলেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন ভারতীয় তপােবনের আদর্শে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ব্রম্মচর্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মাত্র পাঁচজন ছাত্র নিয়ে শুরু হয় এই বিদ্যালয়ের কাজ। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিণত হয় ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’-এ। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, রবীন্দ্রনাথ তাতেও জড়িয়ে পড়েন। রচনা করেন বাংলার মাটি বাংলার জল' গানটি। রবীন্দ্রনাথ শুধু সাহিত্য-শিল্পের চর্চাই করেননি, প্রয়ােজনে দেশ ও জাতির স্বার্থে, মানবতাবিরােধী যে- কোনাে অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর সাহিত্যে হাতেখড়ি|

অল্পবয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ‘ভারতী’ ও বালক’ পত্রিকায় কবিতা লেখা শুরু করেন। কবিতা লেখার ব্যাপারে কবির ভাগনে জ্যোতিপ্রকাশের একটি উল্লেখযােগ্য ভূমিকা ছিল। কবির কথায়—“একদিন দুপুরবেলায় তাহার ঘরে ডাকিয়া লইয়া বলিলেন : “তােমাকে পদ্য লিখিতে হইবে।বলিয়া পয়ার ছন্দে চোদ্দো অক্ষরযােগের রীতিপদ্ধতি আমাকে বুঝাইয়া দিলেন। সেই থেকেই তিনি আমৃত্যু লিখে গিয়েছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কবিতা ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের অন্যান্য শাখা, যেমন—গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, সমালােচনা, চিত্রশিল্প সবক্ষেত্রেই সমান দক্ষ হয়ে ওঠেন। তার বহুমুখী প্রতিভা সর্বত্র বিকশিত হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁর কবিতা রচনা কীভাবে শুরু হল, সে বিষয়ে ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে তিনি বলেছেন-“আমার বয়স তখন সাত-আট বছরের বেশি হইবে না। আমার এক ভাগিনেয় শ্রীযুক্ত জ্যোতিপ্রকাশ আমার চেয়ে বয়সে বেশ একটু বড়াে। তিনি তখন ইংরেজি সাহিত্যে প্রবেশ করিয়া খুব উৎসাহের সঙ্গে হ্যামলেটের স্বগত উক্তি আওড়াইতেছেন। আমার মতাে শিশুকে কবিতা লেখাইবার জন্য তাহার হঠাৎ কেন যে উৎসাহ হইল তাহা আমি বলিতে পারি না। একদিন দুপুরবেলা তাহার ঘরে ডাকিয়া লইয়া বলিলেন, তােমাকে পদ্য লিখিতে হইবে। 

বলিয়া পয়ারছন্দে চৌদ্দ অক্ষর যােগাযােগের রীতিপদ্ধতি আমাকে বুঝাইয়া দিলেন।” শিশু রবীন্দ্রনাথের জীবনে এইভাবে যে কবিতাচর্চার সূচনা ঘটেছিল, তাতে আর কখনও বিরতি ঘটেনি। বয়স এবং অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কবিতা রচনার পাশাপাশি প্রবন্ধ, গান, নাটক, উপন্যাস, ছােটোগল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে তার অসাধারণ প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর বিলেত যাত্রা| Rabindranath Tagore's country journey.

১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর ১৮ বছর বয়সে। রবীন্দ্রনাথকে ইংল্যান্ডে পাঠানাে হয়; ভরতি করা হয় ‘ব্রাইটন। College, London-এর Faculty of Arts & Law বিভাগে। স্কুল ফর বয়েজ’-এ। তারপর তিনি University ভরতি হন। কিন্তু পিতার নির্দেশে পরের বছরই তাকে দেশে। ফিরতে হয়। তাঁর এই বিলেতযাত্রা ও বিলেতবাসের অভিজ্ঞতা। নিয়ে তিনি য়ুরােপ প্রবাসীর পত্র লিখেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- এর জমিদারি জীবন:

১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে পিতার আদেশে রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশােনার ভার নেন। চলে যান অধুনা বাংলাদেশের শিলাইদহে। সেখান থেকে প্রথমে সাজাদপুর ও পরে পতিসরে যান। শিলাইদহের পদ্মাতীরে বসবাসের সময় তিনি যে-অভিজ্ঞতা লাভ করেন, তার ভিত্তিতে পরবর্তীকালে অনেক বিখ্যাত গল্প-কবিতা রচিত হয়। শিলাইদহের উন্মুক্ত প্রকৃতি ও উদারমনা, সহজসরল মানুষগুলি শিল্পী রবীন্দ্রনাথকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর প্রথম লেখা|

হিন্দুমেলার উপহার’ স্বনামে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের প্রথম কবিতা। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে অমৃতবাজার পত্রিকায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রকাশিত কাব্য কবিকাহিনী’ (১৮৭৮)। এই পর্যায়ে তাঁর রচনায় কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর প্রভাব দেখা যায়।কবির নিজস্ব রচনাশৈলীর প্রকাশ দেখা যায় ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘সন্ধ্যাসংগীত' কাব্যে। স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র। এই কাব্যটির প্রশংসা করেন। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর সাহিত্য সম্ভার| Literary collection of Rabindranath Tagore

কবিতা ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য রচনার পরিমাণ বিপুল।।তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টির পরিচয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর কাব্যগ্রন্থ| Rabindranath Tagore's book of poetry.

রবীন্দ্রনাথের লেখা কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য—“মানসী’ (১৮৯০), ‘সােনার তরী’ (১৮৯৩), ‘চিত্রা’ (১৮৯৬), চৈতালি’ (১৮৯৬), কথা’ (১৯০০), কাহিনী। (১৯০০), ক্ষণিকা (১৯০০), নৈবেদ্য’ (১৯০২), ‘খেয়া’(১৯১০), ।গীতাঞ্জলি’ (১৯১১), গীতিমাল্য’ (১৯১৪), গীতালি (১৯১৫), ‘বলাকা' (১৯১৬), পূরবী (১৯২৫), মহুয়া' (১৯২৯), ‘পুনশ্চ’  (১৯৩২), পত্রপুট’ (১৯৩৬), শ্যামলী’ (১৯৩৬), ‘প্রান্তিক (১৯৩৮), আরােগ্য’ (১৯৪০) ইত্যাদি। এ ছাড়া ‘আকাশ-প্রদীপ,  ‘নবজাতক, জন্মদিনে’, ‘শেষ লেখা প্রভৃতি তাঁর লেখা বিখ্যাত। কিছু কাব্যগ্রন্থ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর উপন্যাস। Novels by Rabindranath Tagore.

রবীন্দ্রনাথের লেখা বিখ্যাত কয়েকটি উপন্যাস। হল - চোখের বালি’ (১৯০৩), ‘নৌকাডুবি (১৯০৬), “গােরা। (১৯১০), ‘ঘরে বাইরে’ (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যােগাযােগ। (১৯২৩), “শেষের কবিতা' (১৯২৯), 'চার অধ্যায় (১৯৩৪)। ইত্যাদি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর নাটক| Drama by Rabindranath Tagore.

রুদ্রচণ্ড রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রথম নাটক।।তাঁর অন্য নাটকগুলি হল—“রাজা ও রানী’ (১৮৮৯), ‘বিসর্জন’ (১৮৯০), ‘অচলায়তন’ (১৯১২), ‘ডাকঘর’ (১৯১২), মুক্তধারা। (১৯২২), ‘রক্তকরবী’ (১৯২৪), ‘কালের যাত্রা’ (১৯৩২)। এ । ছাড়া ব্যঙ্গধর্মী কৌতুক নাটক- বৈকুণ্ঠের খাতা’ (১৮৯৭), চিরকুমার সভা' (১৯২৫), ‘গােড়ায় গলদ’ (১৯২৮) ইত্যাদি। এ ছাড়াও চিত্রাঙ্গদা’, ‘বিদায় অভিশাপ’, ‘মালিনী', গান্ধারীর আবেদন’, ‘কর্ণকুন্তী সংবাদ’, ‘ বাল্মীকি প্রতিভা, ‘মায়ার খেলা’, ‘কালমৃগয়া’, ‘প্রকৃতির প্রতিশােধ ইত্যাদি কাব্যনাট্য, নাট্যকাব্য ও গীতিনাট্যও তিনি রচনা করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর প্রবন্ধগ্রন্থ

চিন্তাশীল প্রবন্ধ রচনায় রবীন্দ্রনাথ অনন্যসাধারণ প্রতিভার পরিচয় রেখেছেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য প্রবন্ধগ্রন্থগুলি হল—“সাহিত্য’, ‘সাহিত্যের পথে’, ‘প্রাচীন সাহিত্য’, ‘লােকসাহিত্য’, ‘সাহিত্যের স্বরূপ’, ‘ধর্ম’, ‘শিক্ষা, ‘কালান্তর’, ‘সভ্যতার সংকট’, ‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ, ‘পঞ্চভূত’, ‘বিচিত্র প্রবন্ধ ইত্যাদি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ছােটো গল্প|Short story by Rabindranath Tagore. 

রবীন্দ্রনাথ বাংলা ছােটোগল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার। তাঁর হাতেই বাংলা ছােটোগল্পের সূচনা, বিকাশ ও সার্বিক সার্থকতাপ্রাপ্তি। তাঁর ছােটোগল্পের সংখ্যা ৯০টিরও বেশি। রবীন্দ্রনাথের বিশ্ববিখ্যাত কয়েকটি আন্তর্জাতিকমানের ছােটোগল্প হল—‘পােস্টমাস্টার’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘অতিথি’, ‘নষ্টনীড়, ‘দেনাপাওনা’, ‘শাস্তি’, ‘ছুটি’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘সুভা’, ‘খােকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘হালদার গােষ্ঠী’, ‘ল্যাবরেটরি’, ‘রবিবার’, ‘তিনসঙ্গী’, ‘মেঘ ও রৌদ্র’, ‘গুপ্তধন’, ‘নিশিথে’ ইত্যাদি।সাহিত্যের অন্য প্রকরণগুলিতেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অসাধারণ। 

সব্যসাচীর মতাে তিনি পত্রসাহিত্য, ভ্রমণসাহিত্য, রম্যরচনা সবেতেই নিজস্ব কৃতিত্বের পরিচয় রেখেছেন। তাঁর লেখা প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান মানুষকে শান্তি ও শক্তি জোগায় নতুনভাবে। জীবনকে উপলব্ধি করতে প্রেরণা দেয়। তা ছাড়া তিনি একাধিক। ছদ্মনামেও অসংখ্য রচনা করেছেন। যেমন—ভানুসিংহ ঠাকুর, আন্নাকালী পাকড়াশি, শ্রীমতী কনিষ্ঠা ইত্যাদি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড: 

রবীন্দ্রনাথ কেবল সাহিত্যসৃষ্টিই করেননি, তিনি ভারতীয় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক-ভারতাত্মার । মূর্ত বিগ্রহ। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাত্র পাঁচ জন ছাত্র নিয়েই। শান্তিনিকেতনে ব্ৰচর্য বিদ্যালয়ের সূচনা করেন। পুরাকালের তপােবনের আশ্রমের আদলে এটি পরিচালিত হত। ছােট্ট সেই। বিদ্যালয়ই বর্তমানে বিশ্বখ্যাত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে। পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ একসময়ে বঙ্গভঙ্গবিরােধী আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করেন;শুরু করেন রাখিবন্ধন উৎসব। রচনা করেন বিখ্যাত জাতীয়তাবাদী সংগীত—‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি। আবার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের। প্রতিবাদে তিনি ইংরেজদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ঘৃণাভরে। ত্যাগ করেন। বিশ্বমানবতাবাদী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এভাবেই। মানবতাবিরােধী যে-কোনাে কাজের প্রতিবাদে বারবার সােচ্চার হয়ে ওঠেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর সম্মাননা ও স্বীকৃতি| Honors and Recognitions of Rabindranath Tagore |

রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের একমাত্র নােবেলজয়ী কবি; ভারতীয় ও এশীয়দের মধ্যেও তিনিই প্রথম নােবেলপ্রাপক। গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ ‘Song Offerings'-এর জন্য তিনি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর এই পুরস্কার লাভ করেন। গ্রন্থটি মােট ১০৩টি কবিতা ও গানের ইংরেজি গদ্য-অনুবাদ। এতে গীতাঞ্জলি কাব্যের ৫৩টি এবং ‘গীতিমাল্য’, ‘নৈবেদ্য’, ‘খেয়া’, ‘শিশু’, ‘অচলায়ন ইত্যাদি ন-টি গ্রন্থের বাকি পাশটি কবিতা ও গানের স্ব-কৃত অনুবাদ রয়েছে। এই গ্রন্থটিই কবিকে বিশ্বজনের কাছে পরিচিত করে তােলে। এ ছাড়াও পৃথিবীর দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের স্রষ্টা তিনি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর দেশভ্রমন|Rabindranath Tagore's country tour

রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীর বহুদেশ ঘুরেছেন, যেমন—চিন, জাপান, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, সুইটজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন প্রভৃতি। রাশিয়াভ্রমণ ছিল তার মধ্যে অন্যতম। কবির মতে, সেটি তাঁর এ জন্মের তীর্থদর্শন’। বহু জায়গায় বহু জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি, রাষ্ট্রনেতা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- এর শেষ জীবনী| Biography of Rabindranath Ragore.

১৯৪১-এর ২৫ জুলাই শারীরিক অসুস্থতার জন্য রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় যাত্রা করেন। ৩০ জুলাই তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট, বাংলা ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ, দুপুর ১২ টা ১০ মিনিটে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ ঘটে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মতাে বর্ণময় ও সৃজনশীল মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই এসেছেন। তিনি একাধারে কবি, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাটককার, নাট্য পরিচালক, অভিনেতা, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, শিক্ষাচিন্তক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আরও কত কী! তাঁর মানবতাবাদী চিন্তাধারা কেবল দেশবাসীকেই নয়, বিশ্ববাসীকেও সমৃদ্ধ করেছে। সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র তাই যথার্থই বলেছেন—“কবিগুরু, তােমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নাই।” তিরােধানের অর্ধশতাব্দী পরেও সেই আমাদের বিস্ময়ের ঘাের এখনও কাটে নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী| Rabindranath Tagore Biography in Bengali

অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী| Rabindranath Tagore Biography in Bengali” পােস্টটি পড়ার জন্য। এবং আমাদের পাশে থাকার জন্য। আর এই ভাবেই আমাদের @Todaygkallexams.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো, ধন্যবাদ।

Today Gk All Exams-এর পক্ষ থেকে আপনাদের কে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি পড়ার জন্য। যদি আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের ভালোলেগে থাকে তাহলে নিচে কমেন্টে অবশ্য জানাবেন আর পাশের নীল-রংযের ঘণ্টাটি প্রেস করে আমাদের এই ব্লগ-ওয়েবসাইটটি অবশ্য   সাবস্ক্রাইব করবেন ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.