Type Here to Get Search Results !

ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি, পদমর্যাদা আলোচনা করো।

ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি পদমর্যাদা আলোচনা করো।

ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি, পদমর্যাদা আলোচনা করো।

সংবিধানের ১৫৩নং ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের শীর্ষস্থানে আছেন রাজ্যপাল। গভর্নরের প্রাথমিক কাজ হল সংবিধান ও আইন রক্ষা করা, ক্ষমতা রক্ষা করা...

 অথবা ভারতের কোনো একটি অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ভূমিকা আলোচনা করো।

 অথবা,  ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল কীভাবে নিযুক্ত হন? তাঁর ক্ষমতা, কার্যাবলি ও পদমর্যাদা সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উত্তর: ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি, পদমর্যাদা।(Governor of States):

অঙ্গরাজ্যের শাসনবিভাগ: যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের নীতি অনুযায়ী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের  পাশাপাশি প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যে সরকার রয়েছে। সংবিধানের ১৫৩নং ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের শীর্ষস্থানে আছেন রাজ্যপাল। ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্রের মতো অঙ্গরাজ্যগুলিতেও পার্লামেন্টের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে।১৫৪ নং ধারা অনুযায়ী অঙ্গরাজ্যের শাসনক্ষমতা রাজ্যপালের ওপর ন্যস্ত; রাজ্যপালকে ‘সাহায্য ও পরামর্শ দানের জন্য মন্ত্রীপরিষদ রয়েছে। রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত ক্ষমতা মন্ত্রীপরিষদই কার্যকর করে থাকে। সুতরাং, রাজ্যের শাসনবিভাগ রাজ্যপাল ও মন্ত্রীপরিষদ নিয়ে গঠিত।রাজ্যপাল অঙ্গরাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসনকর্তা।

* রাজ্যপালের যোগ্যতা ও বেতন: ভারতের রাষ্ট্রপতি অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালকে নিয়োগ করেন। ১৫৬ নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যপালের কার্যকাল ৫ বছর। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে  রাজ্যপালকে পদচ্যুত করতে পারেন। রাজ্যপালের যোগ্যতা সম্পর্কে সংবিধানের ১৫৭-১৫৮ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁকে—

  • (i) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
  • (ii) কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে।
  • (iii) তিনি কেন্দ্র বা রাজ্য আইনসভার সদস্য থাকতে পারেন না। 
  • (iv) রাজ্যপাল কোনো ‘লাভজনক’ পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না। 

রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির মতো নিয়মতান্ত্রিক শাসক: নির্বাচিত হলে মন্ত্রীপরিষদের সঙ্গে ক্ষমতা নিয়ে বিরোধ দেখা দিতে পারে। আইনসভার নিকট দায়িত্বশীল মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে কাজ করতে হবে। সুতরাং, রাজ্যপালের ক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রয়োজন নেই।

ভারতের অঙ্গরাজ্যের  ক্ষমতা ও কার্যাবলি| Powers and functions of the Governor of the State of India.

• শাসনসংক্রান্ত ক্ষমতা: সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের শাসন পরিচালনাসংক্রান্ত ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত করেছে। রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপালও মন্ত্রীপরিষদ গঠন সম্পর্কে কতকগুলি ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। মন্ত্রীগণ রাজ্যপালের সন্তুষ্টির ওপর পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্যগণকে রাজ্যপাল নিয়োগ করে থাকেন। অনুন্নত শ্রেণি ও উপজাতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট বিবরণ প্রেরণের দায়িত্বও তাঁর রয়েছে।

আইনসংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির মতো আইনবিভাগের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তিনি রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করেন, অধিবেশন স্থাপিত রাখেন এবং বিধানসভা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেন। রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া আইনসভার কোনো বিল আইনে রূপলাভ করতে পারে না। আইনসভা কর্তৃক গৃহীত বিলে তিনি সম্মতি দিতে পারেন, সম্মতি নাও দিতে পারেন। অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিল পুনর্বিবেচনার জন্য আইনসভার নিকট ফেরত পাঠাতে পারেন। 

বিলটি দ্বিতীয়বার আইনসভার উভয় কক্ষে পাশ হলে রাজ্যপালকে সম্মতি দিতে হয়। রাজ্যপাল কোনো বিলে সম্মতি না দিয়ে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য বিলটি পাঠাতে পারেন। আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকলে রাজ্যপাল জরুরি আইন বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন। আইনসভার অধিবেশন আরম্ভ হওয়ার পর ৫ সপ্তাহ জরুরি আইন কার্যকর থাকে। রাজ্যপাল বিধানসভায় একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন। অঙ্গরাজ্যের আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে উচ্চকক্ষ বিধান-পরিষদে কয়েকজ সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন।

অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যপাল কিছু অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতাও ভোগ করে থাকেন। রাজ্যপালের সুপারিশ ব্যতীত আইনসভায় কোনো অর্থবিল উত্থাপন করা যায় না। কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপাল  অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে ‘বাৎসরিক আর্থিক বিবরণী’ বা বাজেট বিধানসভায় পেশ করবার ব্যবস্থা করেন।

বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা: রাজ্য হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগে রাজ্যপাল কোনো ক্ষমতা ভোগ করেন না। কিন্তু হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। রাজ্যপাল দণ্ডিত অপরাধীর দণ্ড হ্রাস, ক্ষমা প্রদর্শন, দণ্ডাদেশ স্থগিত অথবা দণ্ডাদেশ সংশোধন করতে পারেন। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শনের এক্তিয়ার রাজ্যপালের নেই।

■ শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাসংক্রান্ত ভূমিকা: রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির ন্যায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার  ক্ষমতা ভোগ করেন না। কিন্তু অঙ্গরাজ্যে শাসনতান্ত্রিক সংকট দেখা দিলে রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির নিকট সংবাদ পাঠাতে পারেন। রাজ্যপাল প্রেরিত সংবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। সুতরাং, প্রত্যক্ষভাবে জরুরি ক্ষমতা ভোগ না করলেও রাজ্যপাল পরোক্ষভাবে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাসংক্রান্ত ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন।

■ স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা: সংবিধানে বর্ণিত উপরিউক্ত ক্ষমতা বাদে কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা রয়েছে। যে সকল ক্ষেত্রে রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করেন সেই সকল ক্ষেত্রে তিনি মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করতে পারেন। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অসমের রাজ্যপালের খনিসমূহের ‘রয়্যালটির’ বিষয়ে এবং কোনো রাজ্যপালের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত ইউনিয়ন অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অর্থাৎ, মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ ছাড়া কাজ করবার সুযোগ রয়েছে। এই সীমিত ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ ছাড়া নাগাল্যান্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং সিকিমের রাজ্যপালের কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল মন্ত্রীপরিষদের মতামত গ্রহণে বাধ্য থাকেন না।

ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের পদমর্যাদা| Powers and functions of the Governor of the State of India.

তত্ত্বগতভাবে অঙ্গরাজ্যের শাসন বিভাগের প্রধান হলেন রাজ্যপাল। বাস্তবে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা অনুসারে তিনি নিয়মতান্ত্রিক শাসক এবং মন্ত্রীসভা হল প্রকৃত শাসক। মন্ত্রীসভার পরামর্শে রাজ্যপালের নামে রাজ্যের শাসন পরিচালিত হয়। 

সরোজিনী নাইডু রাজ্যপালকে ‘ সোনার খাঁচায় বন্দি  পাখি ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। 

আবার পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের মতে,“ রাজ্যপালের পদ অর্থহীন নয়, রাজ্যপাল সংবিধান অনুসারে বহু প্রয়োজনীয় কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারেন ।”

তা ছাড়া সংবিধানের 163 ( 2 ) নং ধারা অনুসারে রাজ্যপাল যখন স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করেন এবং কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন, তখন তিনি মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বাধ্য নন। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপালকে সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক শাসক বলে অভিহিত করা চলবে না । তবে রাজ্যপালের পদমর্যাদা তাঁর ব্যক্তিত্ব ও বিচক্ষণতার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে ।

রাজ্যপালের পদমর্যাদা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকের মতে ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির রাজ্যপালগণ প্রকৃত শাসক, আবার অনেকের মতে তারা নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে রাজ্যপালের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির মতোই সীমিত। যেমন, সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের সমস্ত শাসনক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে অর্পণ করা হলেও প্রকৃত ক্ষমতা ভোগ করে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও রাজ্যপালের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ নয়। অঙ্গরাজ্যের শাসনব্যবস্থায় রাজ্যপালের তাৎপর্যহীন ভূমিকা প্রসঙ্গে সরোজিনী নাইডু একসময়-

"বলেছিলেন রাজ্যপাল হলেন "সোনার খাঁচায় বন্দি পাখি"।

তবে অনেকেই রাজ্যপালকে নিয়মতান্ত্রিক শাসক বলার বিরোধী। রাজ্যপালকে প্রকৃত শাসক বলার পিছনে যুক্তিগুলি হল-

(i) সংবিধান অনুসারে রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের প্রকৃত শাসককর্তা। প্রয়োজন হলে তিনি মন্ত্রিসভার পরামর্শ ও সাহায্য গ্রহণ করতে পারেন, আবার নাও পারেন।

(ii) সংবিধানে রাজ্যপালকে যে সকল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেগুলি প্রয়োগ করার জন্য মন্ত্রিসভার পরামর্শ নিতে হয় না এবং এই ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা সম্পর্কে আদালতে প্রশ্নও তোলা যায় না। এইভাবে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজ্যপাল প্রকৃত শাসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন।

(iii) বিধানসভা নির্বাচনে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে রাজ্যপাল নিজের বিবেচনা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন।

(iv) রাজ্যপাল প্রেরিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কোনো রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা বা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারেন। এইভাবে তিনি রাজ্যের মন্ত্রিসভাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেন।

(v) রাজ্য আইনসভা রাজ্যপালকে নিয়োগ করে না এবং তাকে পদচ্যুতও করতে পারে না। রাজ্যপাল হলেন রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি।

সুতরাং রাজ্য সরকারের প্রতি তার অনুগত থাকার প্রয়োজন হয়না। পরিশেষে বলা যায়, ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির রাজ্যপালগণ পুরোপুরি নিয়মতান্ত্রিক শাসক নন, আবার তাকে প্রকৃত শাসকও বলা চলে না। বরং বলা ভালো, রাজ্যপাল হলেন সংবিধান-প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন নিয়মতান্ত্রিক শাসক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.