এ.পি.জে. আব্দুল কালাম এর জীবনী| Biography of A.P.J. Abdul Kalam
অগ্নিপুরুষ আবদুল কালাম (১৯৩১ - ২০১৫) এ.পি.জে. আবদুল কালাম (A.P.J. Abdul Kalam) ছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২ – ২০০৭)। কালাম তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন বিজ্ঞানী হিসেবে পরে এ.পি.জে. আবদুল কালাম (A.P.J. Abdul Kalam) ঘটনাচক্রে গণপ্রজাতন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কালামের জন্ম বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে।
Today Gk All Exams: Apj Abdul Kalam Biography in Bengali – এপিজে আব্দুল কালাম ছিলেন একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী ও সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ, যিনি পরবর্তীকালে ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। মিসাইল টেকনোলজি বিশেষ অবদানের কারনে তালে মিসাইল ম্যান এর উপাধি দেওয়া হয়। কিভাবে তিনি দারিদ্রতার মধ্যে থেকে প্রথমে বিজ্ঞানী ও তার পর রাষ্ট্রপতি হয় তা সমস্ত যুব সমাজকে এক অনুপ্রেরণা জোগাতে সাহায্য করে। আজ আমরা সেই মহান ব্যক্তি ও বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালামের জীবনী (Biography of abdul kalam bangla) সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে পড়বো
Read More: আব্দুল কালামের প্রেরণামূলক বক্তব্য | APJ Abdul kalam quotes.
এ.পি.জে. আবদুল কালাম কে ছিলেন ? Who is A.P.J. Abdul Kalam ?
অগ্নিপুরুষ আবদুল কালাম (১৯৩১ - ২০১৫) এ.পি.জে. আবদুল কালাম (A.P.J. Abdul Kalam) ছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২ – ২০০৭)। কালাম তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন বিজ্ঞানী হিসেবে পরে এ.পি.জে. আবদুল কালাম (A.P.J. Abdul Kalam) ঘটনাচক্রে গণপ্রজাতন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কালামের জন্ম বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে।
এ.পি.জে. আবদুল কালাম (A.P.J. Abdul Kalam) পদার্থবিদ্যা বিষয়ে সেন্ট জোসেফ’স কলেজ থেকে এবং বিমান প্রযুক্তিবিদ্যা (এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিষয় নিয়ে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এম আই টি) থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর চল্লিশ বছর এ.পি.জে. আবদুল কালাম (A.P.J. Abdul Kalam) প্রধানত রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন (ডিআরডিও) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন।
Biography of A.P.J. Abdul Kalam.
Name: | আভুল পকির জয়নুলাবেদীন আব্দুল কালাম বা এ.পি.জে. আবদুল কালাম (A.P.J. Abdul Kalam) |
জন্ম:/Birthday: | ১৫ অক্টোবর ১৯৩১ (15th October 1931) |
জন্মস্থান:/Birthplace: | ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত রামেশ্বরম |
অভিভাবক /পিতামাতা: | পিতা: জয়নুলআবেদিন মারাকায়ার, মাতা: অশিয়াম্মা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | সেন্ট জোসেফ’স কলেজ, তিরুচিরাপল্লি মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি |
জীবিকা | অধ্যাপক, লেখক, বিমান প্রযুক্তিবিদ |
ধর্ম | ইসলাম |
কাজের মেয়াদ | ২০০২ – ২০০৭ |
মৃত্যু /Death: | ২৭ জুলাই ২০১৫ [27th July 2015] |
মৃত্যুর কারণ/Cause of Death: | হৃদরোগ |
Apj Abdul Kalam Biography in Bengali.
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল কালামকে মিসাইলম্যান বলা হয়ে থাকে। ১৯৩১ সালে জন্মেছিলেন তিনি ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত রামেশ্বরম দ্বীপনগরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। পিতা জয়নাল আবেদিন খুব বেশী শিক্ষিত মানুষ ছিলেন না। তবে মনের দিক থেকে তিনি ছিলেন খুবই বড়মাপের। ছোট্টবেলা থেকে পুত্র আব্দুলের মনে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। বারবার তিনি গল্পচ্ছলে আবদুলকে বলতেন পরবর্তী কালে তুমি যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠতে পার। তিন ভাই আর একবোনের সংসার জালালউদ্দিন আর শামসুদ্দিনের সঙ্গে আব্দুলের স্বীকার করেছেন, বেড়ে ওঠার এই ব্যস্ত প্রহরে দু-ভাইয়ের সান্নিধ্যে তাকে নানাভাবে উপকৃত করেছিল।
তিন ভাই ছিলেন পিতার আদর্শে গড়া সততার প্রতিমূর্তি। মা আসিয়াম্মা সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। শত দুঃখকষ্ট জ্বালা যন্ত্রণাকে সহ্য করার মতো সহিষ্ণুতা লুকিয়ে ছিল তাঁর অন্তরে। মায়ের পরিবারের পূর্বপুরুষ ব্রিটিশ প্রদত্ত বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন মা কিন্তু তাঁর এই ভাগ্য বিপর্যয়কে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন। তিনটি পুত্র এবং একটি কন্যা সন্তানকে কিভাবে বড়ো করা যেতে পারে, তাই ছিল তাঁর ইহ জীবনের স্বপ্ন।
এ.পি.জে. আবদুল কালামেরে শৈশবের দিনগুলি:
ছোটবেলার খেলার সাথীদের কথাও মনে পড়ে যায় আব্দুলের। মেলামেশা করতেন রামনাথ শাস্ত্রী, অরবিন্দন আর শিব প্রকাশনের সঙ্গে, তারা সকলেই ছিলেন সনাতনপন্থী হিন্দু পরিবারের সন্তান। আর আব্দুল গোড়ামুসলমান। কিন্তু শৈশবে তাঁদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার ভেদ রেখা ছিল না। তখন তাঁরা সকলেই একসঙ্গে মেলামেশা করতেন। ভারী সুন্দর ছিল শৈশবের এই অকলঙ্ক দিনগুলি।
পৃথিবীর কোনো সমস্যার বোঝা তখন আমাদের মাথার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। স্মৃতিচারণের মাধ্যমে বারবার এই হারিয়ে যাওয়া রঙিন দিনগুলির কথা শুনিয়েছেন আব্দুল কালাম। তখন সারা বছরের সবচেয়ে বড়ো উৎসব ছিল শ্রীসীতারাম কল্যাণম উৎসব। গোটা পরিবার এই উৎসবে অংশ নিত। রাম সীতার মূর্তি মন্দির থেকে নৌকায় করে তুলে বিবাহমন্ডপে নিয়ে যাওয়া হত । আবার উৎসব শেষ হলে দুটি মূর্তিকে ফেরত নিয়ে যাওয়া হত মন্দিরে। কাছেই একটি পুকুর ছিল রামতীর্থ। সেখানে এই দুটি মূর্তিকে শ্রদ্ধাসহকারে অবগাহন করানো হত। ভাবতে অবাক লাগে, আজ থেকে কত বছর আগে গোড়া মুসলমান পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও আব্দুল পরম আগ্রহে ওই বাৎসরিক উৎসবে যোগ দিতেন।
এ.পি.জে. আবদুল কালামেরে শিক্ষাজীবন:
দিন কাটতে থাকে এবার কালামকে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে হবে। পিতা ছিলেন বিদ্যানুরাগী, সংস্কৃত সাহিত্যের গল্পকথা আব্দুলকে শোনাতেন। মা ঠাকুরমার মুখ থেকে আব্দুল রামায়ন এবং মহাভারতের অনেক কাহিনীও শুনেছিলেন। এই ভাবে তার হৃদয়ে সংস্কৃতির পরম্পরা প্রবাহিত হয়েছিল। তিনি ভর্তি হলেন রামেশ্বরম এলিমেন্টরি স্কুলে। পাশাপাশি বেঞ্চে বসে ক্লাস করেন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পুত্রের সঙ্গে টিফিনে একই খাবার ভাগ করে খান। এখানে কোথায় যেন একটা অঘটন ঘটে গেল কালাম তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মাথায় টুপি পড়তেন। এই টুপি দেখে বোঝা যেত তিনি মুসলমানপরিবারের সন্তান ক্লাসে সবসময় প্রথম বেঞ্চে বসতেন।
একদিন কঠিন কঠোর নীতিবাগিস শিক্ষকমশাই আব্দুলকে প্রথম বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দিলেন। আব্দুল এই অপমান অনেকদিন মেনে নিতে পারেননি। অবশ্য পরবর্তীকালে ওই মাস্টারমশাই তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি আবদুলকে আবার প্রথম বেঞ্চে ডেকে নেন। রামেশ্বরমে তখন ছোট ছোট সামাজিক গোষ্ঠীর অস্তিত্ব ছিল। এক গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর ক্ষমতার লড়াই চলত। এই ভেদনীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ধ্বজা তুলতে চেয়েছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিব সুব্রহ্মনিয়াম আয়ার। আয়ার ছিলেন আব্দুলের প্রিয় শিক্ষক। কালাম বড়ো হলেন। গ্রামের সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠলেন। খেতে ভালোবাসতেন মাদ্রাজি খাবার, কলা, ভাত আর সম্বর। লঙ্কার সঙ্গে চাটনি। আব্দুলের বাড়ি থেকে রামেশ্বরমের বিখ্যাত শিব মন্দিরটির দূরত্ব খুবই কম। সেই মন্দিরে মাঝে মাঝেই যেতেন তিনি। চোখ বন্ধ করলে ছোটবেলার খন্ড খন্ড ছবি ভেসে ওঠে।
আবদুল কালামেরে আধ্যাত্মিক-সামাজিক চিন্তা ও শিক্ষাজীবন:
রামেশ্বরম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত পক্ষিলছমন শাস্ত্রীর সঙ্গে পিতার আধ্যাত্মিক আলোচনা বুঝি এখনো শুনতে পান। মুসলমান পিতা এবং হিন্দু পুরোহিত দুধরনের পোশাক পড়ে একই বিষয় নিয়ে ভাববিনিময় করছেন। একটু বড়ো হয়ে আব্দুল বাবার কাছে জানতে চেয়েছিলেন বাবা, প্রার্থনার কি আলাদা অর্থ আছে? বাবা বলেছিলেন শোন আব্দুল প্রার্থনার একটা আলাদা মূল্য আছে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আত্মা আছে। প্রার্থনার দ্বারা আত্মার সাথে দেহের যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
পরবর্তীকালে কালাম জানিয়েছেন আমার বাবারআধ্যাত্মিক চিন্তা ছিল সহজ সরল গ্রাম্য প্রকৃতির। তিনি বলতেন, এ পৃথিবীর সকলেই ঐশবিক অস্তিত্বের অঙ্গ। সকলের মধ্যে স্বয়ং আল্লাহ বসবাস করছেন। এবার কালাম এলেন বৃহত্তর শিক্ষাঅঙ্গনে। ভর্তি হলেন স্টুয়াজ হাইস্কুলে। ছোটবেলার সঙ্গীসাথীদের সাথে আরতাঁর দেখা হতো না। কিশোর কালাম উপলব্ধি করলেন সেই শাশ্বত সত্য জীবনে চলার পথে এভাবেই আমরা একলা পথিক হয়ে যাই। এই হাইস্কুলের অনেকের কথাই মনে পড়ে। ওখানকার শিক্ষক ইয়াদুরাই সলমনাকে তিনি কখনোই ভুলতে পারবেন না। তাঁকে দেখে কিশোর কালামের মনে হত, তিনি বোধহয় বৈদিক যুগের এক ব্রহ্মচারী।
ছাত্রের জীবন অন্বেষনার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সলোমন কালামকে কর্মযোগী পুরুষে পুরুষে পরিনত করেছিলেন। এই শিক্ষক কালামকে তিনটি মূল মন্ত্র শিখিয়েছিলেন। জীবনে আফল হতে হলে তিনটি গুণের অধিকারী হতে হবে ইচ্ছা, বিশ্বাস এবং আশাবাদ। ইচ্ছা হল স্বপ্নের প্রথম প্রহর। যদি মনের মধ্যে ইচ্ছার বীজ তপ্ত না হয় তাহলে আমরা সফলতার গাছ কখনো দেখতে পাবনা। দ্বিতীয় প্রহর হল বিশ্বাস। নিজের কর্তব্যবোধের ওপর অবিচল আস্থা থাকতে হবে। ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস এবং নির্ভরতা রাখতে হবে।সর্বশেষ প্রহরে আশাবাদ জেগে ওঠে।
আশাবাদ না থাকলে অরণ্যচারী মানুষ মহাকাশ বিজয়ী হতে পারতেন না।পরবর্তীকালে সলোমন রেভারেন্ড হয়েছিলেন। তিনি কালামকে বলেছিলেন, কোনো কাজ সার্থকভাবে পূর্ন করতে হলে তোমাকে সেই কাজটির জন্য বাসনা তৈরি করতে হবে। মনে মনে বারবার বলতে হবে, এই কাজটিআমার দ্বারাই হবে। এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য আমি এই পৃথিবীর বুকে জন্ম গ্রহণ করেছি। শিক্ষকের আর একটি কথা কালামকে উদ্দীপ্ত করত। পড়াতে পড়াতে তিনি প্রায়শই বলতেন, বিশ্বাসের জোরে তুমি ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারবে। পরবর্তীকালে কালাম এই ব্যাপারটি নিজের জীবনে সত্যি বলে প্রমান করেছিলেন। সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি জগৎ সভায় ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ১৯৫০ সালে সেন্ট জোসেফ কলেজে ভর্তি হলেন কালাম, ইন্টার মিডিয়েট কোর্সে। এই কলেজে তাঁর চারটি বছর কেটে গিয়েছিল। তারপর উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে পাড়ি।
এ.পি.জে. আবদুল কালামেরে সায়েন্টিস্ট ও কর্মজীবন জীবন:
ছোটবেলা থেকেই ছিলেন বিজ্ঞানের এক অসাধারন প্রভাবশালী ছাত্র। স্কুলের পরীক্ষাতে বরাবর কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছেন। তাঁর কর্মজীবনটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ন। তিনি ভারতের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। এখন আমরা যেসব রকেট উৎক্ষেপণ করি, বা অন্তর্দেশিয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরী করি, তার অন্তরালে আব্দুল কালামের অবদান সবসময় স্মরণে রাখতে হবে। তাঁকেই ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রাণপুরুষ বলা হয়ে থাকে। পারমাণবিক বোমা বিস্ফরনের পরবর্তী সময়ে তিনি একটি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বলেছিলেন যে, যদিও আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরমাণু বোমাকে প্রয়োগ করতে বদ্ধপরিকর, কিন্তু এ বিষয়ে পিছিয়ে থাকলে আমাদের চলবে না, আমাদের একটি নিউক্লিয়ার পোর্টফলিও তৈরি করে ফেলতে হবে।
মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে তিনি তার পড়াশোনা সম্পন্ন করার পরে এপিজে আব্দুল কালাম ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম তিনি তিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) তে টেকনিক্যাল সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন। সেই সংস্থায় কর্মরত থাকা কালীন তিনি তার কর্মজীবনের শুরুতে ভারতীয় সেনার জন্য হোভার এয়ারকারফ একটি নকশা তৈরি করেন। DRDO তে কর্মরত থাকা কালীন Prototype Hovercraft এর জন্য তৈরি একদল ইঞ্জিনিয়ার এর নেতৃত্ব করেন।
১৯৬২ সালে আব্দুল কালাম ভারতীয় রক্ষা সংস্থায়টি (DRDO) থেকে বদলি হয়ে ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র (ISRO) যোগদান করেন। সেখানে তিনি প্রথমে মহান মহাকাশ বিজ্ঞানী ডক্টর বিক্রম সরভাইয়ের নেতৃত্বে কাজ করেন এবং পরবর্তীকালে বড়ো পদে উন্নতি লাভ করেন।
১৯৬৯ সালে এপিজে আব্দুল কালাম ISRO দ্বারা নির্মিত ভারতের প্রথম SLV -৩ (রোহিণী) এর জন্য তাকে প্রজেক্ট হেড করা হয়।
তার নেতৃত্বে ১৯৮০ সালে ভারত প্রথম তার SLV (রোহিণী) কে পৃথিবীর নিকটতম কক্ষপথে স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র (ISRO) যোগ দেওয়ার পর থেকে এপিজে আব্দুল কালামের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল, তখন তিনি অনুভব করেছিলেন যেন তিনি যেমন ভেবেছিলেন ঠিক তেমন কাজ করার সৌভাগ্য পেয়েছেন ।
১৯৮২ সালে, তিনি আবার প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থায় (DRDO) পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। এপিজে আব্দুল কালামের নেতৃত্বে ইন্টিগ্রেটেড গাইডেড মিসাইল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম সফলভাবে চালু হয়েছিল, তিনি এই প্রকল্পের প্রধান নির্বাহী ছিলেন। সেই প্রজেক্ট এর জন্য ভারত অগ্নি ও পৃথিবী মিসাইল পাই।
১৯৯২ সালে, এপিজে আব্দুল কালাম তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর উপদেষ্টা, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (ডিআরডিও) সেক্রেটারি বিভাগের সচিব হন। তিনি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এই পদে কাজ চালিয়ে যান।
মহাকাশ বিজ্ঞানে ও ভারতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থাই এই অবদানের জন্য তাকে ভারতের সবথেকে সন্মানীয় পুরস্কার “ভারতরত্ন” দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী - "উইংস অফ ফায়ার"। এই গ্রন্থের পাতায় পাতায় বিধৃত আছে মানব কল্যাণে উৎসর্গকৃত প্রাণ এই মহান বিজ্ঞানীর অন্তরের ইচ্ছা।
এ.পি.জে. রাষ্ট্রপতি হিসেবে এপিজে আব্দুল কালাম:
এপিজে আব্দুল কালাম বৈজ্ঞানিক হিসেবে অধিক নাম ও খ্যাতির কারণে, তাকে ২০০২ সালে তৎকালীন ভারতের কেন্দ্রের (NDA) সরকারের তরফ থেকে রাষ্ট্রপতি জন্য তার নাম মনোনীত করা হয়। এবং তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী লক্ষ্মী শেগলকে কে বিপুল ভোটে পরাজিত করে।
- ২৫ জুলাই ২০০২ সালে তিনি ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ভারতের এমন তৃতীয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন, যিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পূর্বে ভারতের সম্মানিত পুরষ্কার “ভারতরত্ন” দ্বারা ভূষিত হন। এর আগে ডাঃ রাধাকৃষ্ণান ও জাকির হুসেন রাষ্টপাতি হওয়ার পূর্বেই “ভারতরত্ন” পুরস্কারটি পেয়েছিলন।
- তিনি বৈজ্ঞানিক হিসেবে তো জনপ্রিয় ছিলেন কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হলে ওঠে, তাকে “জনতার রাষ্ট্রপতি” হিসেবে অভিহিত করা হত।
- কিভাবে তিনি একটি ছোট শহরে জন্মগ্রহন করে, প্রথমে বৈজ্ঞানিক ও পরে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে তিনি রাষ্ট্রপতি পদ পর্যন্ত তার যাত্রা করেন, তা প্রতিটি যুবককে অনুপ্রেরণা জোগাতে সাহায্য করে।
- দ্বাদশ রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটেলের মেয়াদ শেষে পরবর্তী সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার নাম আবারও আলোচনায় ছিল, তবে অনেক কম সমর্থনের অভাবের কারণে তিনি তার প্রার্থিতার ধারণা ত্যাগ করেছিলেন।রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর গ্রহণের পরে ডাঃ এপিজে আব্দুল কালাম শিক্ষকতা, লেখালেখি, বিজ্ঞান এবং গবেষণার মতো কাজে নিযুক্ত ছিলেন।
- এ ছাড়া তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স ব্যাঙ্গালোরের ফেলো, ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের চ্যান্সেলর, চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয় তিরুবনন্তপুরম, এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক হন এপিজে আব্দুল কালাম।
- এপিজে আব্দুল কালাম সর্বদা দেশের যুবকদের উন্নতির জন্য বিভিন্ন মঞ্চে মোটিভেশন বক্তব্য রাখেন। দেশের যুব সমাজের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে তিনি 2 বার এবং ‘এম.টি.ভি. ‘যুব আইকন অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড’ এর জন্য মনোনীত হয়েছিল। এছাড়া তাকে দেশের অনেক কলেজে ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে ডাকা হয়েছিল।
এ.পি.জে. আব্দুল কালাম এর পুরুস্কার ও সম্মান:
মহাকাশ বিজ্ঞান ও ভারতীয় সুরক্ষা বেবস্থায় তার অতুলনীয় কাজকর্মের জন্য তাকে ভারতে ও দেশ-বিদেশ থেকে একধিক পুরুস্কার ও উপাধি দিয়ে সম্মানিত করা হয়। তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য সম্মান গুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল –
- ভারত সরকারের তরফ থেকে সম্মানজনক ‘ভারতরত্ন,’ এবং ‘পদ্মভূষণ’ দিয়ে ভূষিত করা হয়েছিল।
- ১৯৯৭ সালে ভারত সরকার তাকে জাতীয় সংহতকরণের জন্য ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার প্রদান করে।
- আব্দুল কালামকে বীর সাভারকার পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
- ২০০০ সালে, এপিজে আব্দুল কালাম আলভার্স গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক ‘রামানুজন পুরস্কার’ লাভ করে।
- ২০০৩ ও ২০০৪ সালে পরপর দুই বছর তিনি MTV ‘যুব আইকন অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড’ দ্বারা সন্মানিত হন।
- ২০০৭ সালে, তিনি রয়েল সোসাইটি থেকে ‘কিং চার্লস দ্বিতীয় পদক’ পেয়েছিলেন।
- ২০০৯ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে আন্তর্জাতিক কার্মান অফ্ উইংস অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সন্মানিত করা হয়।
- এছাড়া এ.পি.জে আব্দুল কালাম ৪০ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি পেয়েছেন।
এ.পি.জে. আবদুল কালাম এর মৃত্যু – A.P.J. Abdul Kalam Death:
এ.পি.জে. আব্দুল কালাম সম্পর্কে কিছু গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য:
- এ.পি.জে আব্দুল কালামের আত্মজীবনী “উইংস অফ ফায়ার” প্রথম দিকে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে পরে তা ফরাসি ও চিনা ভাষা সহ আরো মোট তেরোটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
- এপিজে আব্দুল কালাম শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হওয়ার কারণে, ২০১০ সালে জাতিসংঘ তরফ থেকে এপিজে আব্দুল কালামের জন্মদিন ১৫ অক্টোবর এ ” বিশ্ব ছাত্র দিবস” ঘোষণা করেন।
- এপিজে আব্দুল কালাম বই ছাড়া তিনি কারও কাছ থেকে কোনও উপহার কখন গ্রহণ করেননি।
- ২০১১ সালে, নীলা মাধব পান্ডা কালামের জীবন ভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন, যার শিরোনাম ” I Am Kalam “
- এপিজে আব্দুল কালামের গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞান ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়।
- তিনি দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে প্রদত্ত বক্তৃতা গুলির জন্য কোন ফি নেননি।
- এ. পি. জে আব্দুল কালাম একজন নিরামিষভোজী ছিলেন।
- তিনি বিজ্ঞানের সাথে সাথে সাহিত্যের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। যার ফলস্বরূপ তিনি তার মাতৃভাষা তামিলে অনেকগুলি কবিতার রচনা করেন।
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....