Type Here to Get Search Results !

জিরো আওয়ার কি?| অনাস্থা প্রস্তাব কি? আলােচনা কারো।

জিরো আওয়ার ও অনাস্থা প্রস্তাব কি? আলােচনা কারো।

প্রশ্ন. জিরো আওয়ার কি? Zero hours| অনাস্থা প্রস্তাব কি?(No-Confidence Motion) আলােচনা কারো। 8+8

Content of table(toc)

জিরো আওয়ার (Zero hours) ও অনাস্থা প্রস্তাব (No-Confidence Motion), সম্বন্ধে লেখো।ভারতের সংসদীয় কার্যপদ্ধতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল কিছু কিছু ...

ভারতের সংসদীয় কার্যপদ্ধতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল কিছু কিছু ধারণা, বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তসূচক প্রস্তাব এবং দৃষ্টি-আকর্ষণ বিজ্ঞপ্তির অবস্থিতি। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য কিছু বিষয় হল 'জিরো আওয়ার, অনাস্থা প্রস্তাব', ছাঁটাই প্রস্তাব’, মুলতুবি প্রস্তাব’ এবং দৃষ্টি-আকর্ষণ প্রস্তাব ইত্যাদি।

জিরো আওয়ার কি? (Zero Hours):

জিরো আওয়ার (Zero Hours): ভারতীয় সংসদে তথা রাজ্য বিধানমণ্ডলীতে Zero Hour-এর প্রচলন আছে। Rules of Procedure বা সংসদের প্রকরণবিধিতে এই বিষয়ে কোনও বিশেষ সময় নির্দেশ করা হয়নি। দীর্ঘকাল অনুসৃত প্রথা অনুসারেই এর প্রচলন সংবিধানে এর উল্লেখ নেই।প্রতিদিনের সংসদীয় কার্যাবলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়,যথা—

1. সরকারি কর্মসূচি  (Government Business)
2. বেসরকারি কর্মসূচি (Non-Government Business or Private Member's Business )। 

প্রথম পর্ব হিসাবে চিহ্নিত বেসরকারি কাজকর্ম প্রশ্নোত্তর পর্ব দিয়েই শুরু হয়ে থাকে। তা ছাড়া মুলতুবি প্রস্তাব, উল্লেখ পর্ব, দৃষ্টিআকর্ষণী প্রস্তাব প্রভৃতিও সভার বেসরকারি কর্মসূচি বা কাজকর্মের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অপরদিকে সরকারি কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরেই সরকারি কর্মসূচি বা কাজকর্ম চালু হয়। পরিষদীয় প্রকরণ বিধিতে প্রত্যেক প্রকরণের জন্য ক্রমানুসারে পৃথক সময় নির্দিষ্ট করা রয়েছে। কিন্তু 'জিরো আওয়ার নামে কোনােকিছু নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা নেই। সংসদে বেসরকারি কাজকর্ম ও সরকারি কাজকর্ম পর্বের মধ্যবর্তী সময়কে বলা হয় জিরাে আওয়ার।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষেই শুরু হয় জিরাে আওয়ার, অর্থাৎ ঘড়িতে যখন ঠিক দুপুর ১২টা বাজে তারপর থেকে পুরাে ১ ঘন্টা ধরে অর্থাৎ ১টা পর্যন্ত আইনসভার যে-কোনাে কক্ষের কাজকর্ম চলতে থাকে বলে এই সময়কে জিরো আওয়ার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সময়সূচির পর সংসদে বিরতি ঘােষণা করা হয় এবং বিরতির পর আবার সরকারি কাজকর্ম চালু হয়।

সভায় উত্থাপনের দায়িত্ব: জিরাে আওয়ার প্রথমে কে উত্থাপন করবেন তা মাননীয় অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করে। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জিরাে আওয়ার সংক্রান্ত বিষয়টি কেন্দ্র বা রাজ্যের আইনসভায় একটি অভ্যাস বা রীতি হিসেবে পরিগণিত হত, তারপর ওই বছরই পরিষদীয় প্রকরণ বিধিতে ৩৭৭ নং রুলে জিরাে আওয়ার স্থান পেয়েছিল। 

জিরাে আওয়ারে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কোনাে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এম এল এ (MLA) দ্বারা সভায় উত্থাপন করা হয়। বিষয়টি এমনই গুরুত্বপূর্ণ যে, পূর্বে এই বিষয়ে নােটিশ দেওয়ার মতাে বা সভাকে অবহিত করার মতাে অবকাশ ছিল না। তাই সরাসরি কোনো মাননীয় সাংসদ বিধায়ক মাননীয় অধ্যক্ষ মহােদয়কে সভা চলাকালীন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করে থাকেন। এরপর মাননীয় অধ্যক্ষ মহােদয় গুরুত্ব বিবেচনা করে অনুমতি দিলে জিরাে আওয়ারে উক্ত বিষয়গুলি সভায় উত্থাপন করে তা আলােচনা করা হয়।

বেসরকারি কর্মসূচি: বেসরকারি কর্মসূচি দিয়ে সদস্যদের প্রতিদিনের কাজ শুরু হয় যার মধ্যে পড়ে প্রশ্নোত্তর, মুলতুবি প্রস্তাব, দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব, উল্লেখ পর্ব। বেসরকারি কর্মসূচি শেষ হলে সরকারি কর্মসূচি ধরা হয়। Rules of Procedure বা প্রকরণবিধিতে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য ক্রমভিত্তিক সময় নির্দেশ করা হচ্ছে।কিন্তু জিরো আওয়ারের কোনোও উল্লেখ নেই। সুতরাং ধরে নেওয়া হয় যে, প্রথমপর্বে বেসরকারি কর্মসূচি  শেষ হলে এবং দ্বিতীয় পর্বে সরকারি কর্মসূচি আরম্ভ হওয়ার আগে অর্থাৎ, দুই পর্বের মাঝখানে কোনও সময়ের অবকাশ নেই, তখন একে ধরা হয় বলে এর নামকরণ হয়েছে জিরো আওয়ার। 

জিরো আওয়ারে সদস্যগণ অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সভায় উত্থাপন করতে পারেন। সাম্প্রতিক ঘটনাটি এতই আকস্মিক যে, পূর্বাহ্ণে নোটিশ দিয়ে অন্য কোনও প্রকরণ অবলম্বন করে এটি উত্থাপন করার সুযোগ ছিল না। সংশ্লিষ্ট সদস্য সভা চলাকালীন বিষয়টি সরকারি অধ্যক্ষ মহোদয়কে জানিয়ে দেন। কাকে উত্থাপন করার অনুমতি দেওয়া হবে সে সম্পর্কে স্বয়ং অধ্যক্ষ মহোদয় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন

অনাস্থা প্রস্তাব (No-Confidence Motion): 

অনাস্থা প্রস্তাব কি?: সংসদীয় কার্যপদ্ধতির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অনাস্থা প্রস্তাব। ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যে এমনকি অঞ্চলে যে শাসনব্যবস্থার অবতারণা ঘটেছে, তাকে বলা হয় দায়িত্বশীল সরকার। এখানে প্রতিনিধি সভার আস্থাভাজন মন্ত্রী এবং মন্ত্রীমণ্ডলী কেবল শাসনক্ষমতায় আসীন থাকতে পারেন। সভার আস্থা হারিয়েছে এইরকম প্রস্তাব মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে উত্থাপন করা হলে তাকেই বলা হয় অনাস্থা প্রস্তাব। ব্যক্তিগতভাবে কোনাে একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যায় না। সমগ্র মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে হয়।

অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পদ্ধতি: মন্ত্রীমণ্ডলীর উপর অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করার অধিকার যে-কোনো সদস্যের রয়েছে। এর জন্য লিখিত নোটিশ দেওয়া আবশ্যক। সংবিধানের বিধান এই বিষয়ে অত্যন্ত পরিষ্কার যে মন্ত্রীসভা লোকসভার / বিধানসভার নিকট দায়ী। অর্থাৎ,  পরিষদীয় গণতন্ত্র অনুসারে মন্ত্রীমণ্ডলী ততক্ষণই তাঁদের পদে আসীন থাকবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আইনসভায় বর্তমান থাকবে। 

অর্থাৎ, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই সরকারি দলের স্থায়িত্বের প্রধান স্তম্ভ। লোকসভা/বিধানসভার সদস্যগণ মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব কক্ষে পাশ করে নিতে পারলেই সমগ্র মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়। সংসদের ৫০ জন সদস্য প্রস্তাবের সমর্থনে দণ্ডায়মান হলে, প্রস্তাবটি আলোচনার জন্য সভায় গৃহীত হয়।অনাস্থা প্রস্তাব গোটা মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে পেশ করতে হয়, ব্যক্তিগতভাবে কোনও একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পেশ করা যায় না। 

কোনও নিন্দাসূচক প্রস্তাবে নিন্দার কারণ অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবে কোনও কারণ দেখানোর প্রয়োজন নেই। কারণ উল্লিখিত হলেও তা অনাস্থা প্রস্তাবের অঙ্গ নয়। অধ্যক্ষের অনুমতি পাবার পর সদস্য প্রস্তাবের সপক্ষে দাঁড়িয়ে উঠে সমর্থন জানাতে হয় এবং তাহলেই প্রস্তাব উত্থাপন অনুমোদিত হবে। অনাস্থা প্রস্তাবের বয়ান হবে, এই সভা মন্ত্রীমণ্ডলীর ওপর আস্থার অভাব প্রকাশ করছে। 

সভার অনুমোদন পাবার পর সংশ্লিষ্ট সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন, অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনা কোনও বিষয়ের মধ্যে নিবদ্ধ থাকে না—সকল সদস্যের সামনে যে-কোনও বিষয় আলোচনার পথ খোলা থাকে। সদস্যদের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী/মুখ্যমন্ত্রী শেষ বক্তা হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের উত্তর প্রদান করেন। অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনকারী ও জবাবি উত্তর দেবার অধিকার আছে। প্রস্তাবের আলোচনা শেষ হলে, অধ্যক্ষ সভার সিদ্ধান্ত জানার জন্য ভোট গ্রহণ করেন

অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার (No-Confidence Motion): 

অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনকারী সদস্য ইচ্ছা করলে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আলােচনার জন্য প্রস্তাবটি সভায় পেশ করার পূর্বে তাতে স্বাক্ষরকারী সব সদস্যকে প্রত্যাহার সংক্রান্ত এবং সব সদস্যের স্বাক্ষর সংবলিত একটি নােটিশ জমা দিতে হয়।

অনাস্থা প্রস্তাবের সমালােচনার উর্ধ্বে নয়─

  • লোকসভায় বা বিধানসভায় যখন কোনাে রাজনৈতিক দল। এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকে তখন অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করা ও সেটিকে পাস করানাে অলীক কল্পনামাত্র।
  • বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাহায্যে সরকারের ভূমিকার বিরােধী যুক্তি তর্ক জনসাধারণের কাছে পৌছে যায়। এর ফলে ক্ষমতাসীন দলের জনসমর্থন হারানাের আশঙ্কা থাকে।

অনাস্থা প্রস্তাব সামগ্রিকভাবে সরকারের অক্ষমতা ও অযােগ্যতাকে প্রতিপন্ন করার জন্য আক্রমণ পরিচালিত হয়। সরকার পক্ষ সর্বদা অনাস্থা প্রস্তাবের মােকাবিলা করার ব্যাপারে সক্রিয় ও যত্নবান হয়। কাজেই এ কথা বলা যেতেই পারে যে, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এর রাজনৈতিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.