Type Here to Get Search Results !

প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার ও পুর্নগঠনের সাহিত্য।Bengail Literature

প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার ও পুর্নগঠনের সাহিত্য।Bengail Literature


➡প্রাচীন বাংলার সাহিত্যিক উৎস সমূহ......

প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার ও পুর্নগঠনের সাহিত্য উপাদান এর গুরুত্ব অপরিসীম।বাংলার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল উৎসের মতো সাহিত্যিক উৎস পর্যাপ্ত নয়।এর অনেক কারনের মধ্যে রয়েছে, বাংলার ইতিহাস রাজনৈতিক বিপ্লব এতটার ঘন ঘন সম্পন্ন হয়েছে যে, এক বংশের ইতিহাস অন্য বংশের লোকদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন মনে করতো না । তবু ও কিছু কিছু যে সাহিত্য উপাদান পাওয়া যায় সেগুলো প্রায় সবগুলোই ধর্মসংক্রান্ত পুস্তক কিছু কিছু সাহিত্য উপাদানে প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ,সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের চিত্র পাওয়া যায় ।

1. হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থাদি:

বেদ, গীতা, পুরান, রামায়ন,মহাভারত প্রভৃতি হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থে প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় এ সমস্ত তথ্যাবলি নিঃসন্দেহে অতি মূল্যবান।তাই এসব তথ্য সতর্কতার সাথে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস বিনিমার্ণ করা সম্ভব । এ সমস্ত গ্রন্থের কাহিনী মূলত কিংবদন্তিমূলক। তবে ইতিহাস রচনায় অনেক গুরুত্ব উপকরণ।

2. জৈন ও বৌদ্ধ কাহিনী:

বাংলার প্রাচীন  ইতিহাস রচনার সাহিত্যিক উৎস হিসেবে জৈন ও বৌদ্ধ কাহিনীর গুরুত্ব অপরিসীম। তিনটি দ্বীপবংশ, মহাবংশ, এবং আর্যমুঞ্জশ্রীমূলকল্প নামক বৌদ্ধধর্মসংক্রান্ত গ্রন্থে বাংলার প্রাচীন অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এই গ্রন্থে শশাঙ্ক ও পাল রাজাদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

3. পতঞ্চলি ও পানিনির ব্যাকরণ:

পতঞ্চলি ও পানিনির  দুজন ব্যক্তি ছিলেন সংস্কৃত ভাষায় ব্যকরণ রচিয়তা । তাদের রচিত ব্যকরনগুলোতে প্রাচীন বাংলার তথ্য পাওয়া যায় । এসব তথা প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

4. কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র:

ভারতের সৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত - এর প্রধানমন্ত্রী কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন।এ গন্থে ভারতের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তা- ছাড়া এই গন্থে প্রাচীন বাংলার শ্বেত-স্নিগ্ধ- সুতিবস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। বাংলার অর্থনৈতিক ইতিহাস রচনায় ক্ষেত্রে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গুরুত্ব অপরিসীম।

5. বানভট্টের  ‘হর্ষচরিত’:

উত্তর ভারতের সম্রাট হর্ষবর্ধন (৬০৬-৬৪৭ খ্রি) এর মহাকবি ছিলেন বানভট্ট। বানভট্ট হর্ষরচিত নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন । বানভট্ট হর্ষরচিত গ্রন্থ যানা যায় গৌড়রাজা শশাঙ্গ ও গৌড়ীয় সাহিত্যের কথা অবগত  হওয়া যায় ।সুতরাং এই গ্রন্থ প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় হর্ষচরিত একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

6. কলহনের রাজতরঙ্গিনী:

ভারতের কাশ্মিরের ঐতিহাসিক ছিলেন কলহণ। কলহণ  “রজতরঙ্গিণী নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে মূলত কাশ্মিরের ইতিহাস বিবৃত হয়েছে । গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়ে কাশ্মির বাজার পৌত্র “জয়াপীড়” গৌড় রাজ্য অধিকার করেন। এসব তথ্য প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনকে যৌক্তিক মাত্রায় উপনীত করতে পারে।

7. সন্ধ্যাকরনন্দীর রামচরিত:

প্রচীন বাংলার ইতিহাসগ্রন্থের মধ্যে সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত গ্রন্থটি অনন্য সাধারন একটি দলিল। কাব্য ছন্দে রচিত রামচরিত  গ্রন্থটি মূলত দ্বিতীয মহিপাল থেকে মদনপাল পর্যন্ত পালবংশ এবং কৈবর্তর রাজবংশের ইতিহাস রচনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

সন্ধ্যাকর নন্দীর বাড়ি ছিল পৌন্ডদেশ । তাকে কলিকাল বাল্মীক উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল । তিনি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনায় করেন।সন্ধ্যাকর  নন্দী পিতা প্রজাপতি নন্দী ছিলেন একজন পাল রাজার পদস্থ রাজকর্মচারী। ফলে তিনি খুব কাছে থেকে রাজদরবারে ঘটনাবলি দেখেশুনে এই গ্রন্থটি রচনা করেন।

➡পর্যটকদের বিবরনী.......

প্রচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের ভ্রমন  সংক্রান্ত বিবরনী একটি গুরুত্বপূর্ন  উপাদান। ভারতবর্ষের বাইরের লেখকদের বিশেষ করে গ্রিক ও রোমান লেখকদের রচনা এবং চীনদের রচনায় প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উপাদান খুজে পাওয়া যায়।

1. গ্রিক ও রোমান লেখকদের বিবরনী......

গ্রিক লেখক টলেমি রচিত ভূগোলবিষক গ্রন্থে ভারতবর্ষে ও বাংলায় অবস্থিত সমুদ্রবন্দরের বিবরনী রয়েছে । রোমান লেখক প্লিনি গঙ্গারিডহ রাজ্যের বিবরন দিয়েছে।

সুতরাং গ্রিক ও রোমান লেখকদের বর্ননায় যে গঙ্গারিডহ রাজ্যের তথ্য অবগত হওয়া যায়,তা প্রকৃতপক্ষে ‘বঙ্গ’ জনপদ। গঙ্গার প্রধান দুটি জলধারা হুগলি ভাগীরথীর ও পদ্ম - মেঘনা যা পরবর্তীতে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর পতিত হয়।

2. চীন পর্যটকদের বিবরনীয়.......

চীনের সাথে ভারতবর্ষের যোগাযোগ প্রাচীনকাল থেকেই । চীনা পর্যটকরা ভীর্থবূমি দর্শন ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ সংগ্রহের জন্য ভারত ও বাংলাই পরিভ্রমন করেছেন। এদের মধ্যে ফা হিয়েন ও হিউয়েন সাং এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের বর্ননায় সমগ্র ভারত ও বাংলার রাজনৈতিক ,সামাজিক ,অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ইতিহাস এমনকি প্রাকৃতিক ইতিহাসের তথ্য অবগত হওয়া যায়।

ফা হিয়েন গুপ্তবংশের সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত /বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে ভারতবর্ষের এসে ১৫ বছর অতিবাহিত্যের রাজত্বকালে ২ বছর অবস্থান করেন । তার বিবরনে বাংলার সাধারন জনগনের অবস্থার সাঠিক চিত্র ফুটে উঠেছে।

হিউয়েন সাং ভারবর্ষে এসে ১৪ বছর অবস্থান করে ।তিনি বাংলার, পুন্ড্রবর্ধন ,কর্ণসুবর্ণ, সমতট, তাম্রলিপ্তি সফর - এই সব অঞ্চলের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ধর্মীয় অবস্থার বিবরন তুলে ধরেন ।

3. তিব্বতীয় পর্যটকদের বিবরন.....

তিব্বত ভারতবর্ষের ইতিহাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবেই সম্পর্কযুক্ত ও বাংলার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।তিব্বতি লেখকদের রচনায় বাংলার অনেক তথ্যই পাওয়া যায়। বাংলায় অনেক লেখকদের রচিত গ্রন্থ তিব্বতীয় তাদের ভাষায় অনুবাদ করেছেন লামা তারানাথ তিব্বতি লেখকদের মধ্যে অন্যতম।

4. বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য.......

বাংলা পৃথিবীর বৈচিত্র‌্যপূর্ণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যর অধিবাসী। এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এ অঞ্চলের সমাজ,সংস্কৃতি ধর্ম ভাষা ও রাজনৈতিক জীবন কেউ প্রভাবিত করেছে। বৈশিষ্ট্যসমূহ ....... 

(১) বাংলা ভূ-খন্ডের অস্তিত্ব বা অবস্থান উপমহাদেশের সর্বপূর্বে প্রান্তে নির্ধারিত হয়।

(২) ভূতাত্ত্বিকভাবে বাংল সুগঠিত ভূভাগ এবং অপেক্ষাকৃত নবীন ভূমি।

(৩) বাংলা পৃথিবীর বৃত্তের বদ্বীপ বা ভেল্টা ।

(৪) বাংলার দক্ষিণে উন্মক্ত সমুদ্রদার ।

(৫) বাংলা মৌসুমি জলবায়ু দেশ,এটা বৃষ্টি বহুল অঞ্চল ।

(৬)বাংলা প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত নৌ এবং স্থল যোগাযোগ পথ সমৃদ্ধ একটি  অঞ্চল।

(৭) বাংলার রয়েছে অসংখ্য  নদী সমন্বিত বিরল -ভূ-বৈমিষ্ট্য।

(৮)বাংলা ভারতীয উপমহাদেশ এবং দক্ষিন - পূর্ব এশিয়া সাথে LAND BRIDGE হিসেবে যোগাযোগ ভূমিকা রাখছে এর ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যর কারনে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.