Type Here to Get Search Results !

মিল (Mill) ব্যতিরেকী পদ্ধতি| The Method of Difference.

মিল (Mill) ব্যতিরেকী পদ্ধতি| The Method of Difference.

মিল (Mill) ব্যতিরেকী পদ্ধতি| The Method of Difference.


মিল (Mill) ব্যতিরেকী পদ্ধতির সূত্রটি এইভাবে ব্যক্ত করেছেন : আলােচ্য ঘটনাটি যদি একটিমাত্র দৃষ্টান্তে উপস্থিত থাকে ও অন্য একটি দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত থাকে এবং দুটি দৃষ্টান্তেই যদি এই একটিমাত্র ঘটনা ছাড়া অপর সকল পূর্ববর্তী ও অনুবর্তী ঘটনা সম্পূর্ণভাবে এক প্রকারের থাকে, তাহলে যে ঘটনাটি প্রথম দৃষ্টান্তে উপস্থিত থাকে ও দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত থাকে, সেটিই হবে আলােচ্য ঘটনার কার্য বা কারণ বা কারণের অপরিহার্য অংশ। 

ব্যতিরেকী পদ্ধতি যে অপসারণের সূত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত তা হল : ‘যে পূর্ববর্তী ঘটনাকে বাদ দিলে কার্যটিও বাদ পড়ে যায়, সেই পূর্ববর্তী ঘটনা সেই কার্যেরই কারণ বা কারণের অংশ হবে। 

ব্যতিরেকী পদ্ধতির সূত্রটিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এই পদ্ধতিকে প্রয়ােগ করতে হলে কেবলমাত্র দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়ােজন হয় : একটি হল সদর্থক (Positive) এবং অপরটি হল নঞর্থক (Negative)। পরীক্ষণের সাহায্যে এই দু-রকমের দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করতে হয়। এই দুটি দৃষ্টান্তের মধ্যে একটিমাত্র ঘটনার পার্থক্য থাকে এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ঘটনাগুলির মধ্যে মিল থাকে। প্রথম দৃষ্টান্তে একটিমাত্র বিশেষ ঘটনা উপস্থিত থাকলে আলােচ্য ঘটনাটিও উপস্থিত থাকে। আবার দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে একটিমাত্র ঘটনা অনুপস্থিত থাকলে আলােচ্য ঘটনাটিও অনুপস্থিত থাকে। এর থেকে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, দুটি দৃষ্টান্তের মধ্যে যে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে পার্থক্য থাকে, সেই ঘটনাটিই হল আলােচ্য ঘটনার কার্য বা কারণ বা কারণের অপরিহার্য অংশ।

এই পদ্ধতিকে ব্যতিরেকী পদ্ধতি (The Method of Difference) বলা হয়। কারণ এক্ষেত্রে দুটি দৃষ্টান্তকে পরস্পরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে, এদের মধ্যে কেবলমাত্র একটি বিষয়ে ব্যতিরেকী বা পার্থক্য (difference) থাকে।

কারণ যেসকল ক্ষেত্রে পরীক্ষণ সম্ভব নয় এবং কেবলমাত্র পর্যবেক্ষণই সম্ভব (যেমন- বন্যা, ভূমিকম্প, গ্রহণ প্রভৃতি), সেইসব ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য আমাদের অন্বয়ী পদ্ধতির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এ প্রসঙ্গে মনে রাখা প্রয়ােজন যে, অন্বয়ী পদ্ধতিকে মূলত পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি বলা হলেও এই পদ্ধতিকে পরীক্ষণের ক্ষেত্রেও প্রয়ােগ করা যায়। বস্তুত, যেসব ক্ষেত্রে পরীক্ষণ সম্ভব, সেসব ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণও সম্ভব। তবে যেসকল ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোনাে পথ নেই, সেইসব ক্ষেত্রেই অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়ােগ করা হয়। অপর কথায়, এই পদ্ধতি কার্য বা কারণকে প্রমাণ না করে কেবলমাত্র কার্যকারণ সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয় বলে একে পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়ােগ করা হয়। এজন্য বলা হয় : অন্বয়ী পদ্ধতি হল মূলত পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি।

মিল (Mill) ব্যতিরেকী পদ্ধতি| The Method of Difference.


[তর্কবিজ্ঞানী মেলােন (Mellone) আরও সহজভাবে ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করেছেন : “যখন একটি বিষয়কে যােগ করলে অপর একটি ঘটনা আবির্ভূত হয় কিংবা একটি বিষয়কে বাদ দিলে অপর একটি ঘটনা অন্তর্হিত হয় কিন্তু স্থানান্য সকল অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে, তখন সেই বিষয়টি ঘটনার সঙ্গে কার্যকারণ সম্পর্ক যুক্ত" "When the addition of an agent is followed by the appearance of a certain event, or its subtraction by the disappearance of a certain event, other circumstances remaining the same, the agent is causally connected with the event."]

সাংকেতিক উদাহরণ (Symbolical Example)



.:. A হল a-এর কারণ।

এখানে ১নং উদাহরণে পূর্ববর্তী ঘটনা থেকে A-কে বাদ দেওয়ার জন্য অনুবর্তী ঘটনা থেকে a অন্তর্হিত হয়েছে এবং ২নং উদাহরণে পূর্ববর্তী ঘটনার সঙ্গে A-কে যােগ করার ফলে অনুবর্তা ঘটনাতে a আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য সকল অবস্থা সম্পূর্ণভাবে অপরিবর্তিত আছে। সুতরাং, A হল a-এর কারণ।

বাস্তব উদাহরণ (Concrete Example):


১। একটি বায়ুপূর্ণ পাত্রে ঘন্টা বাজিয়ে দেখা গেল যে, ঘন্টার শব্দ হচ্ছে। কিন্তু পাত্রটিকে বায়ুশূন্য করে ঘন্টা বাজিয়ে দেখা গেল যে, ঘণ্টার শব্দ হচ্ছে না। এর থেকে অনুমান করা যায় যে, বায়ুর উপস্থিতি হল শব্দের কারণ।

২। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গে থাইরয়েড গ্রন্থি (Thyroid gland) বর্তমান থাকলে বুদ্ধিও বর্তমান থাকে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের সাহায্যে শরীর থেকে থাইরয়েড গ্রন্থি বাদ দিলে বুদ্ধি।

ক. ব্যতিরেকী পদ্ধতির সুবিধা:


১) ব্যতিরেকী পদ্ধতি হল মূলত পরীক্ষণ পদ্ধতি। এজন্য এই পদ্ধতি নিশ্চিতভাবে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণ করতে পারে।
২) অন্বয়ী পদ্ধতি বা অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যে যে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় তার সত্যতা ও প্রমাণ সম্ভাব্যক্ষেত্রে এই পদ্ধতির দ্বারা নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
৩) প্রয়ােগের দিক থেকে এই পদ্ধতি খুবই সহজ ও সরল 

খ. ব্যতিরেকী পদ্ধতির দোষ বা সংকীর্ণতা:


১) ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়ােগক্ষেত্র অতীব সংকীর্ণ। এই পদ্ধতিকে মূলত পরীক্ষণের পদ্ধতি বলা হয়, কারণ এই পদ্ধতির দৃষ্টান্ত কেবলমাত্র পরীক্ষণের সাহায্যেই পাওয়া যায়। কাজেই, যেসকল ক্ষেত্রে পরীক্ষণ সম্ভব নয়, সেইসব ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে প্রয়ােগ করা যায় না। সুতরাং, এই পদ্ধতির বিশেষ অসুবিধা হল এর
প্রয়ােগক্ষেত্র খুবই সীমিত।

২) ব্যতিরেকী পদ্ধতির সাহায্যে আমরা কার্য থেকে কারণের দিকে অগ্রসর হতে পারি না। পরীক্ষণ সম্বন্ধীয় পদ্ধতির অন্যতম অসুবিধা হল, এক্ষেত্রে আমরা কেবলমাত্র কারণ থেকে কার্যে যেতে পারি; কিন্তু কার্য থেকে কারণে যেতে পারি না। ব্যতিরেকী পদ্ধতি যেহেতু, পরীক্ষণের উপর নির্ভরশীল, সেহেতু এ ক্ষেত্রেও পরীক্ষণের এই সংকীর্ণাটি দেখা যায়।

৩) ব্যতিরেকী পদ্ধতি বহুকারণের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে দূর করতে পারে না। এই পদ্ধতির সাহায্যে আমরা সিদ্ধান্ত করি যে, অনুবর্তী ঘটনাটির কারণ হল তার পূর্ববর্তী ঘটনা। কাজেই, ব্যতিরেকী পদ্ধতি কেবলমাত্র একটি বিশেষ ক্ষেত্রে কারণ নির্ণয় করতে পারে; কিন্তু সেই কারণটিই যে সকল ক্ষেত্রে কোনাে কার্যের একমাত্র কারণ, তা প্রমাণ করতে পারে না। সুতরাং, এক্ষেত্রে বহুকারণের সম্ভাবনা থেকে মুক্ত হওয়া যায় না।

৪) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে অসতর্কভাবে প্রয়ােগ করলে কাকতালীয় দোষ (Fallacy of Post hoc ergo propter hoc) দেখা

গ. ব্যতিরেকী পম্পতির বৈশিষ্ট্য:


ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে মূলত পরীক্ষণের পদ্ধতি বলা হয়। কারণ, এই পদ্ধতির প্রয়ােজনীয় দৃষ্টান্ত একমাত্র পরীক্ষণের সাহায্যেই সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। বস্তুত, একমাত্র পরীক্ষণের ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিকে যথাযথভাবে প্রয়ােগ করা যায়। এই পদ্ধতিতে কেবলমাত্র দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়ােজন হয়—একটি সদর্থক এবং অন্যটি নঞর্থক।এই দুটি বিশেষ ধরনের দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা সহজসাধ্য কাজ নয়। একমাত্র পরীক্ষণের সাহায্যেই এই সংগ্রহ কাজ সম্ভব হয়। এই পদ্ধতিতে এমন দুটি দৃষ্টান্ত গ্রহণ করতে হয়, যেখানে একটি বিষয় ছাড়া আর
সকল বিষয় অপরিবর্তিত থাকে। এক্ষেত্রে একটি ঘটনা একটি দৃষ্টান্তে উপস্থিত থাকে এবং অপর একটি দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত থাকে। এইঅন্তর্হিত হয়। এর থেকে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, “থাইরয়েড গ্রন্থি হল বুদ্ধির কারণ”।

এই পদ্ধতিকে প্রয়ােগ করার জন্য কেবলমাত্র সদর্থক ও নঞর্থক এই দু-প্রকার দৃষ্টান্তের প্রয়ােজন হয়। কাজেই, প্রাত্যহিক জীবনে এই । পদ্ধতিকে সতর্কভাবে প্রয়ােগ করতে পারলে সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত লাভ করা যায়। 
মিল (Mill)-এর মতে, 'ব্যতিরেকী পদ্ধতি হল প্রমাণ পদ্ধতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি’ (The Method of Difference is a Method of Proof per excellence) দেয়। ধূমকেতু দেখা গেল এবং তার পরেই যুদ্ধ আরম্ভ হল। এক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়ােগ করে যদি অনুমান করা হয় যে, ধূমকেতুর বির্ভাবই যুদ্ধের কারণ, তাহলে কাকতালীয় দোষ ঘটবে।

৫) ব্যতিরেকী পদ্ধতি কারণ ও শর্ত-এর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না। এই পদ্ধতির সাহায্যে অনুমান করা যায় যে, পূর্ববর্তী ঘটনা হল অনুবর্তী ঘটনার কারণ। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় যে, পূর্ববর্তী ঘটনাটি হল অনুবর্তী ঘটনার একটি শর্তমাত্র, সমগ্র কারণ নয়। যেমন, যদি বলা হয় যে, ঝড় ওঠার জন্য নৌকাডুবি হল, তাহলে ভুল হবে। কেননা, নৌকাডুবির কারণ কেবল ঝড় নয়; নৌকার আয়তন, জলের গভীরতা, নৌ-চালকের অপটুতা ইত্যাদি আনুষঙ্গিক বিষয়ও কারণ। সুতরাং, এক্ষেত্রে ঝড় (পূর্ববর্তী ঘটনা) নৌকাডুবির (অনুবর্তী ঘটনার কারণ নয়, একটি শর্ত মাত্র।

৬) ব্যতিরেকী পদ্ধতি তার পরিবেশ থেকে স্থায়ী কারণ (Permanent cause)-কে অপসারণ করতে পারে না। পরীক্ষণের পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির ক্ষেত্রে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন ওঠে। এজন্য এই পদ্ধতি নঞর্থক দৃষ্টান্তের সাহায্যে অপ্রয়ােজনীয় বিষয়গুলিকে আলােচ্য ঘটনা থেকে অপসারণ করে। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ, বায়ুর চাপ, চুম্বকের আকর্ষণ, স্বাভাবিক উয়তা প্রভৃতি স্থায়ী কারণকে কখনােই সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা সম্ভব নয়। কেননা, এমন কোনাে দৃষ্টান্ত নেই, যেখানে এগুলির উপস্থিতি নেই।
 
জাতীয় বিশেষ ধরনের দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের সাহায্যে পাওয়া যায়, একমাত্র পরীক্ষণের দ্বারা সম্ভব হয়। এজন্য বলা হয়, পদ্ধতি হল প্রধানত পরীক্ষণ পদ্ধতি (The Method of Difference is essentially a Method of Experiment) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে আবার প্রমাণের পদ্ধতি বলা হয়। অন্বয়ী পদ্ধতি যে কার্যকারণ সম্বন্ধের ইঙ্গিত দেয়, ব্যতিরেকী পদ্ধতি তা প্রমাণ করে। কাজেই, অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতির বিশেষ গুণ হল, এই পদ্ধতিকে যথাযথভাবে প্রয়ােগ করতে পারলে ফলের সম্বন্ধে কোনাে সন্দেহ থাকে না। পরীক্ষণের উপর ভিত্তি করে এই পদ্ধতি সিদ্ধান্তে । উপনীত হয় বলে এর সিদ্ধান্ত সুনিশ্চিত হয়। বস্তুত, সম্ভাব্যক্ষেত্রে অন্বয়ী ব্যতিরেকী।পদ্ধতি বা অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তকে এই পদ্ধতির দ্বারা
প্রমাণ করা সম্ভব হয়। এজন্য মিল (Mill) বলেন : ব্যতিরেকী পদ্ধতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.