Type Here to Get Search Results !

শ্রী' শব্দটির গুরুত্ব। শ্রী শব্দের অর্থ কি?| নামের আগে শ্রী'| Sri Name Meaning.

শ্রী' শব্দটির গুরুত্ব। শ্রী শব্দের অর্থ কি?| নামের আগে শ্রী'| Shree Name Meaning.

শ্রী' শব্দটির গুরুত্ব।শ্রী শব্দের অর্থ কি?| নামের আগে 'শ্রী' শব্দটি থাকা কেনো প্রয়োজন। Shree Name Meaning.

শ্রী' শব্দটি এই ভূখণ্ডের, সর্বজনীন সৌন্দর্যবাচক শব্দ,শ্রী শব্দটি স্ত্রীবাচক (শ্রী+পি) নিষ্পন্ন। যিনি জগতের আধার হরিকে আশ্রয় করেন, তিনিই শ্ৰীলক্ষ্মী..

শ্রীমদ্ভগবদগীতা তেও শ্রী' শব্দটির ব্যবহার আছে।এবং ভগবান "কৃষ্ণের" নামের আগেও শ্রী' শব্দটির ব্যবহার আছে (শ্রীকৃষ্ণ। হিন্দু ধর্মের সকল দেবতা ও দেবীদের নামের আগে 'শ্রীশ্রী'  শব্দটির ব্যবহার করা হয়.

শ্রী' শব্দটি এই ভূখণ্ডের, সর্বজনীন সৌন্দর্যবাচক শব্দ আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগেও হিন্দু র্বিশেষে সকল বাঙালিই নামের আগে শ্রী শব্দটি ব্যবহার করত। শ্রী ছিল এই অঞ্চলের একটি সর্বজনীন সৌন্দর্যবাচক শব্দ। শ্রী শব্দটি স্ত্রীবাচক (শ্রী+পি) নিষ্পন্ন। যিনি জগতের আধার হরিকে আশ্রয় করেন, তিনিই শ্ৰী বা লক্ষ্মী। শ্রী শব্দটির বিবিধ অর্থ: বাণী, ঐশ্বর্য, জাগতিক সমৃদ্ধি, বুদ্ধি, বৃদ্ধি,কীর্তি, উদয়, প্রভা, দীপ্তি, সৌন্দর্য, সিদ্ধি এবং ধর্ম-অর্থ-কামের সম্মিলনে ত্রিবর্গ। আফগানিস্তান (গান্ধার) থেকে ইন্দোনেশিয়া (যবদ্বীপ), ব্রুনাই,ভিয়েতনাম সর্বত্রই পবিত্র শ্রী শব্দটি ব্যবহৃত হত। মালয়েশিয়াতে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় সহ সকলেই শ্রী শব্দটি আজও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নামের পূর্বে ব্যবহার করে। বিষয়টি সে দেশের মন্ত্রী এমপি সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামের দিকে লক্ষ্যকরেলেই সুস্পষ্টভাবে বােঝা যায়। 

মালয়েশিয়া পার্শ্ববর্তী অধুনা মুসলিম রাষ্ট্র ব্রুনাইয়ের রাজধানীর নামের সাথে বর্তমানেও শ্রী শব্দটি ব্যবহৃত - 'বন্দর শ্রীভগবান' (বন্দর শিরি ভগওয়ান)। বৃহত্তর ভারতবর্ষ তাে বটেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রত্যেকটা ভাষাতেই জাতিধর্মনির্বিশেষে শ্রী শব্দটি আজও প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হয়।

  • মায়ানমারের বর্মী ভাষায়:356 (thiri)
  • ইন্দোনেশীয় ভাষায়: শ্রি
  • ইন্দোনেশীয় জাভানীয় ভাষায়:
  • মের ভাষায়: (Srey) and iii (Serey)
  • লাওসের লাও ভাষায়: a (Si) and as (Sri)
  • মালয়েশিয়ার মালয় ভাষায়: (Seri)
  • থাইল্যান্ডের থাই ভাষায়: লন্ট (Siri) and লওঁ (Sri or Si)
  • কম্বােডিয়ার চাম ভাষায়: Ché

শ্রী শব্দটি সুপ্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। ঋগ্বেদের খিলসূক্তের মধ্যে 'শ্রীসূক্ত' নামে একটি সূক্ত আছে।সেখানে লক্ষ্মী স্বরূপা মহাদেবী শ্ৰীর মাহাত্ম্য অসাধারণ শব্দ ব্যঞ্জনায় বর্ণিত হয়েছে।ঋগ্বেদের শ্রীসূক্তে বলা হয়েছে, ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক সম্পদ, সৌভাগ্য সম্পদ, আরােগ্য সম্পদ, সৌন্দর্য সম্পদ সহ সকল সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী এবং দাত্রী হলেন শ্রীদেবী।একারণে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর পাশে সর্বদা শ্রীদেবীকে দেখা যায়। 

শ্রী' শব্দটির গুরুত্ব। শ্রী শব্দের অর্থ কি? Shree Name Meaning.

ঋগ্বদের শাকল শাখার অন্তর্ভুক্ত দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূক্তটি বৈদিক 'শ্রীসূক্ত'।

ওঁ হিরণ্যবর্ণাং হরিণীং সুবর্ণরজতজা। 

চন্দ্রাং হিরন্ময়ীং লক্ষ্মীং জাতবেদো ম আবহ। 

তাং ম আবহ জাতবেদো লক্ষ্মীমনপগামিনীম্। 

যস্যাং হিরণ্যং বিন্দেয়ং গামশ্বং পুরুষানহম্। 

অশ্বপূর্বাং রথমধ্যাং হস্তিনাদপ্রবােধিনীম্। 

শিয়ং দেবীমুপয়ে শ্ৰীৰ্মাদেবীর্জুষতাম্ ॥

কাং সােস্মিতাং হিরণ্যপ্রাকারামাদ্ৰাং জ্বলন্তীং তৃপ্তাং তর্পয়ন্তীম্।

পদ্মে স্থিতাং পদ্মবর্ণাং তামিহােপম্বুয়ে শিয়৷

চন্দ্রাং প্রভাসাং যশসা জ্বলন্তীং শ্রিয়ং লােকে দেবজুষ্টামুদারা।

তাং পদ্মিনীমীং শরণমহং প্রপদ্যেহলক্ষ্মীর্মে নশ্যতাং ত্বাং বৃণে।

"হে জাতবেদ অগ্নিদেব! সুবর্ণবর্ণা, হরিণীর মত চঞ্চল,

সােনা এবং রূপার বিবিধ মালায় বিভূষিত ; পূর্ণিমার

চন্দ্রের মত প্রকাশমানা, হিরন্ময়ী লক্ষ্মীকে আমার জন্য আহ্বান করুন।

হে জাতবেদ অগ্নিদেব! নিম্নগমনরােধকারী সেই লক্ষ্মীকে আমার জন্য আহ্বান করুন। যিনি আহুতা হলে আমি স্বর্ণ, গে, অশ্ব, পুত্র মিত্রাদি প্রাপ্ত হব। অশ্ব যাঁর পুরােভাগে, রথাসীনা হস্তীর বৃংহণ নাদ দ্বারা যিনি প্রকৃষ্টরূপে জ্ঞাপিকা; সেই শ্রীদেবীকে আমার নিকট আহ্বান করুন, তিনিই আমাকে কৃপা অনুগ্রহ করবেন। ব্রহ্মারূপা, স্মিতহাস্যকারিনী, সুবর্ণাদির দ্বারা পরিবেশিষ্টা, আদ্রা, প্রকাশমানা, প্রসন্নবদনা, ভক্তের মনােবাঞ্ছাপূর্ণকারিণী, পদ্মাসীনা, পদ্মবর্ণা সেই শ্রীদেবীকে আহ্বান করি। চন্দ্রের ন্যায় প্রভাসম প্রকাশমানা, নিজ যশে প্রজ্জ্বলিত, জগতের শ্রীস্বরূপা, ইন্দ্রাদিদেবসেবিতা, পদ্মিনীর শরণ গ্রহণ করছি। হে শ্রীদেবি! আমার দুর্ভাগ্যসূচক অলক্ষ্মী বিনষ্ট হােক, আমি তােমার শরণ নিলাম।" কিন্তু 

বর্তমানে দেশের হিন্দুরা যেভাবে শ্রী শব্দটিকে তাদের জীবন থেকে বিদায় করে দিয়েছে, এতেই হয়ত দিনেদিনে তারা শ্রীহীন হয়ে যাচ্ছে। শ্রী শব্দটি হল এই ভূখণ্ডের একটি সর্বজনীন পরিচয়ের সৌন্দর্যবাচক শব্দ।

দেশের পুরানাে পরচা, দলিলপত্রে হিন্দু-র্বিশেষে সকলের নামের সাথে আজও শ্রী শব্দটিকে পাওয়া যায়।শ্রী শব্দটি নিজের নামে সাথে স্বয়ং ব্যবহৃত হয় না। কথাটি প্রচলিত এবং জনপ্রিয় হলেও, কথাটি সঠিক নয়। আমরা যদি আমাদের বাঙালি মহাপুরুষদের দিকে তাকাই তবে বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র সহ সকলের লেখালেখি এবং স্বাক্ষরে শ্রী শব্দটির উপস্থিতিটি কমন। তারা সকলেই তাদের নামের স্বাক্ষরে শ্রী শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তাই আমাদের সকলেরই নামের সাথে এই ভূখণ্ডের সর্বজনীন শ্বাশত পরিচয়ের চিহ্ন শ্রী শব্দটি ব্যবহার করা প্রয়ােজন। এতে সকলেই সর্বদা শ্রীযুক্ত হবে। তাইতাে সঞ্জয়ের মুখে বলা গীতার শেষ শ্লোকটিতেও শ্রী শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এ শেষ শ্লোকটি খুবই তাৎপর্যময়, মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবহ। সর্বদা শ্রী, বিজয়, উত্তরােত্তর সমৃদ্ধি এবং ঐক্যবদ্ধতার অখণ্ডিত রাজনৈতিক নীতির আশ্রয়ে থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।

যত্র যােগেশ্বরঃ কৃষ্ণো যত্র পার্থো ধনুর্ধরঃ। 

তত্র শ্রীর্বিজয়াে ভূতিধ্রুবা নীতির্মতির্মম 

(শ্রীমদ্ভগবদগীতা:১৮.৭৮) 

"যেখানেই যােগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং ধনুর্ধারী রক্ষাকারী পার্থ থাকবে; সেখানেই সর্বদা শ্ৰী, বিজয়,উত্তরােত্তর সমৃদ্ধি এবং ঐক্যবদ্ধতার অখণ্ডিত রাজনৈতিক নীতি সর্বদাই বিরাজ করবে।"বৈদিক শ্রী এবং লক্ষ্মী একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।তাই শ্রীসূক্তে অসংখ্যবার 'লক্ষ্মী' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

ঋগ্বেদের একাধিক মন্ত্রে 'শ্রী' শব্দটির উল্লেখ আছে: ঋগ্বেদের একাধিক মন্ত্রে 'শ্রী' শব্দটির উল্লেখ আছে:

"সােমঃ শ্রীণন্তি পৃশ্নয়ঃ"(০১.৮৪.১১)

"শ্রীণন্তি মতিভিঃ স্ববিদম্" (০৯.৮৪.০৫)

"শ্রীণন্তি বসুভির্ন নিক্তৈঃ" (০৯.৯৩.০৩)

ঋতুচক্রে শীতকালে শ্রীপঞ্চমী নামে একটি তিথিই আছে, যে তিথিতে গৃহ সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দিনটিকে বসন্তপঞ্চমীও বলা হয়। শীতের তীব্রতা উত্তরায়ণ সংক্রান্তি থেকেকমতে শুরু করে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে এসে অনেকটাই কমে গিয়ে, দেহে শ্রী বা সৌন্দর্য প্রকাশিত হতে থাকে।শ্রীপঞ্চমীতে গায়ে হলুদ মেখে স্নান করার বিধি।

© কুশল বরণ চক্রবর্তী,সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.