Type Here to Get Search Results !

ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী এবং পদমর্যাদা সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী  এবং  পদমর্যাদা সম্বন্ধে আলোচনা করো।

প্রশ্ন. ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী  এবং  পদমর্যাদা সম্বন্ধে আলোচনা করো।

অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী: ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্রের ন্যায় অঙ্গরাজ্যেরও পার্লামেন্টীয় শাসনব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদার অনেক সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়।সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের শাসনক্ষমতা রাজ্যপালের ওপর ন্যস্ত এবং রাজ্যপালকে সাহায্য ও পরামর্শ। দানের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীপরিষদ থাকে। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী মন্ত্রীপরিষদই প্রকৃতপক্ষে রাজ্যপালের ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকে। মন্ত্রীপরিষদের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীই প্রকৃত শাসকের ভূমিকা গ্রহণ করেন।

মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী এবং পদমর্যাদা উল্লেখ করা হল:

1. মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল: মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপাল ও মন্ত্রীপরিষদের মধ্যে প্রধান যোগসূত্র বলা যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। অবশ্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের নিজস্ব বিচার-বিবেচনার সুযোগ কম থাকে ; কারণ স্বাভাবিক অবস্থায় বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকেই  মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করতে হয়। রাজ্যের শাসনসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় এবং মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্ত রাজ্যপালকে জানানো মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য। তাছাড়া শাসনপরিচালনা ও আইনের প্রস্তাব সম্পর্কে রাজ্যপাল যা জানতে চান, তাও রাজ্যপালকে জানানো মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। সংবিধান যে সকল বিষয়ে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার নির্দেশ করেছে, সেই সকল ছাড়া রাজ্যপাল নিয়মতান্ত্রিক শাসকের ভূমিকা গ্রহণ করে থাকেন। তবে সংবিধানে রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয় না।

2. মুখ্যমন্ত্রী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল: মুখ্যমন্ত্রী হলেন বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবেই মুখ্যমন্ত্রী সরকার গঠনের অধিকার লাভ করেন এবং জনগণের নিকট তিনিই নেতা হিসেবে গণ্য হন। সুতরাং, দলের জনপ্রিয়তা রক্ষা করা, দলীয় সংগঠন ও শৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তাঁর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শিতার দ্বারা তিনি জনগণের  সম্মুখে দলের নীতি ও কর্মসূচি সার্থকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। নির্বাচনের সময়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। দলের জনপ্রিয়তা এবং দলের প্রতি জনসমর্থনই মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

 3. মুখ্যমন্ত্রী ও আইনসভা: অঙ্গরাজ্যের আইনসভা বিশেষত বিধানসভার কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার নেতা ; সুতরাং, আইনসভার অভ্যন্তরে দলকে পরিচালনা ছাড়াও বিরোধী দলের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক রক্ষা করা, সরকারের নীতি কর্মসূচিকে ব্যাখ্যা করা প্রভৃতি দায়িত্ব তাঁকে পালন করতে হয়। প্রয়োজনীয় আইনকানুন রচনার ক্ষেত্রে সরকারি প্রস্তাবকে সমর্থন এবং পাশ করাবার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্যোগী হতে হয়।

4. মুখ্যমন্ত্রী ও ক্যাবিনেট: মুখ্যমন্ত্রী হলেন মন্ত্রীপরিষদের প্রধান স্তম্ভ, তাঁকে ঘিরেই সরকারের উত্থান-পতন হয়ে থাকে। অন্যান্য মন্ত্রীগণ মুখ্যমন্ত্রীর সহকর্মী হলেও সমান পদমর্যাদাসম্পন্ন বলা যায় না।মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে রাজ্যপাল অন্যান্য মন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী কারা হবেন, কোন্  মন্ত্রী কোন্ দপ্তরের দায়িত্ব লাভ করবেন তা মুখ্যমন্ত্রী স্থির করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো মন্ত্রীর  মতবিরোধ ঘটলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। 

প্রয়োজন হলে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের মাধ্যমে  কোনো মন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী ক্যাবিনেটের সভাপতি। ক্যাবিনেটের বৈঠক আহ্বান করা, ক্যাবিনেটের কর্মসূচি স্থির করা এবং বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে ক্যাবিনেটের নীতি ও কর্মসূচি কার্যকর করার ক্ষেত্রে তাঁর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং, সমগ্র শাসনব্যবস্থার তত্ত্বাবধান এবং বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাই মুখ্যমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলা যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করলে মন্ত্রীপরিষদের পতন হয়।

ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা: 

ভারতীয় সংবিধানে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলির যে উল্লেখ রয়েছে তা থেকে উপলব্ধি  করা যায় যে, মুখ্যমন্ত্রীই হলেন অঙ্গরাজ্যের প্রকৃত শাসক। তাঁর ক্ষমতা ব্যাপক বললে অত্যুক্তি হয় না।বাস্তবক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা নির্ভর করে পদাধিকারীর ব্যক্তিত্ব ও কর্মকুশলতার ওপরে। তাছাড়া দলের ওপর মুখ্যমন্ত্রীর প্রভাব তাঁর নেতৃত্বের প্রতি দলের অকুণ্ঠ আস্থা এবং অন্যান্য মন্ত্রীর সহযোগিতা মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা নির্ধারণ করে। 

আইনসভায় দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে মুখ্যমন্ত্রী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু অঙ্গরাজ্যে বিভিন্ন দলের সম্মেলনে জোট সরকার গঠিত হলে মুখ্যমন্ত্রীকে সকল দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে অন্যান্য দলের সহযোগিতা ও আস্থা তাঁর ভূমিকা নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করে। ভারতীয় সংবিধানে অঙ্গরাজ্যের প্রকৃত শাসনকর্তা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্ব স্বীকার করা হলেও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদার পার্থক্য লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতার পার্থক্যহেতু পদমর্যাদার এই তারতম্য বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.