Type Here to Get Search Results !

মাইকেল মধুসূধন দত্তর - সেরা ৫টি কবিতা ।

Michael Madhusudhan Dutt - Top 5 Poems.

Michael Madhusudhan Dutt - Top 5 Poems.

মাইকেল  মধুসূধন দত্তর - সেরা ৫টি কবিতা ।বঙ্গভূমির প্রতি, বঙ্গভাষা, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, পুরুলিয়া,  অভিষেক...

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঊনবিংশ পাওয়ার শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী এবং নাট্যকার ও প্রহসন রচয়িতা। তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তি গণ্য করা হয়। ঐতিহ্যের অনুবর্তিতা অমান্য করে নব্যরীতি প্রবর্তনের কারণে তাকে অভিবাদন করা বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসাবেওহিত হয়। উইকিপিডিয়া

মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্ম: 25 জানুয়ারী 1824, যশোর জেলা, বাংলাদেশ। মৃত্যু: 29 জুন 1873, কলকাতা।পিতামাতা: জাহ্নবী দেবী, রাজনারায়ণ দত্ত। পত্নী: রেবেকা থম্পসন ম্যাকটাভিশ (ম. 1848-1856)। ডাকনাম: টিমোথি পেনপোয়েম। শিক্ষা: প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশপস কলেজ

মাইকেল  মধুসূধন দত্তর - সেরা ৫টি কবিতা।

মাইকেল মধুসূধন দত্তর কবিতা "বঙ্গভূমির প্রতি"

বঙ্গভূমির প্রতি

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

"My Native Land, Good night": Byron

রেখো, মা, দাসেরে মনে,,          এ মিনতি করি পদে।

সাধিতে মনের সাদ,

ঘটে যদি পরমাদ,

 মধুহীন কোরো না গো         তব মনঃকোকনদে।

প্রবাসে দৈবের বশে,

জীব-তারা যদি খসে

এ দেহ-আকাশ হতে,—          নাহি খেদ তাহে।

জন্মিলে মরিতে হবে,

অমর কে কোথা কবে,

চিরস্থির কবে নীর           ,হায় রে, জীবন-নদে?

কিন্তু যদি রাখ মনে,

নাহি, মা, ডরি শমনে;

মক্ষিকাও গলে না গো,            পড়িলে অমৃত-হ্রদে!

সেই ধন্য নরকুলে,

লোকে যারে নাহি ভুলে,

মনের মন্দিরে সদা             সেবে সর্বজন;-

কিন্তু কোন গুণ আছে,

যাচিব যে তব কাছে,

হেন অমরতা আমি,      কহ, গো,শ্যামা জন্মদে!

তবে যদি দয়া করো,

ভুল দোষ, গুণ ধরো,

অমর করিয়া বর        দেহ দাসে, সুবরদে!

ফুটি যেন স্মৃতি-জলে,

মানসে, মা, যথা ফলে

মধুময় তামরস         কি বসন্ত, কি শরদে! 

মাইকেল মধুসূধন দত্তর কবিতা "বঙ্গভাষা"

বঙ্গভাষা

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;--

তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,

পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ

পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।

কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি!

অনিদ্রায়, অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ,

মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;--

কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন!

স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে, --

"ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,

এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?

যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যারে ফিরি ঘরে।"

পালিলাম আজ্ঞা সুখে' পাইলাম কালে

মাতৃভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে।।

মাইকেল মধুসূধন দত্তর কবিতা "ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর"

 ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।

করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,

দীন যে, দীনের বন্ধু !- উজ্জল জগতে

হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।

কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,

যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,

সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে

গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে!

দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী।

যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে

দীর্ঘ-শিরঃ তরু-দল, দাসরূপ ধরি।

পরিমলে ফুল-ফুল দশ দিশ ভরে,

দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,

নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে

মাইকেল মধুসূধন দত্তর কবিতা "পুরুলিয়া"

পুরুলিয়া

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

পাষাণময় যে দেশ, সে দেশে পড়িলে

বীজকুল, শস্য তথা কখন কি ফলে?

কিন্তু কত মনানন্দ তুমি মোরে দিলে,

হে পুরুল্যে!দেখাইয়া ভকত-মণ্ডলে!

শ্রীভ্রষ্ট সরস সম, হায়, তুমি ছিলে,

অজ্ঞান-তিমিরাচ্ছন্ন এ দূর জঙ্গলে;

অজ্ঞান-তিমিরাচ্ছন্ন এ দূর জঙ্গলে;

এবে রাশি রাশি পদ্ম ফোটে তব জলে,

পরিমল-ধনে ধনী করিয়া অনিলে!

প্রভুর কি অনুগ্রহ! দেখ ভাবি মনে,

(কত ভাগ্যবান্ তুমি কব তা কাহারে?)

রাজাসন দিলা তিনি ভূপতিত জনে!

উজলিলা মুখ তব বঙ্গের সংসারে;

বাড়ুক সৌভাগ্য তব এ প্রার্থনা করি,

ভাসুক সত্যতা-স্রোতে নিত্য তব তরি।

মাইকেল মধুসূধন দত্তর কবিতা "অভিষেক" 

অভিষেক 

মাইকেল  মধুসূধন দত্ত  

কনক-আসন ত্যজি, বীরেন্দ্রকেশরী

ইন্দ্ৰজিৎ, প্রণমিয়া, ধাত্রীর চরণে,

কহিলা, – “কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি

এ ভবনে? কহ দাসে লঙ্কার কুশল।”

শিরঃ চুম্বি, ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা

উত্তরিলা; — “হায় ! পুত্র, কি আর কহিব

কনক-লঙ্কার দশা ! ঘোরতর রণে,

হত প্রিয় ভাই তব বীরবাহু বলী!

তার শোকে মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি,

সসৈন্য সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।”

জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;-

“কি কহিলা, ভগবতি? কে বধিল কবে

প্রিয়ানুজে? নিশা-রণে সংহারিনু আমি

রঘুবরে ; খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিনু

বরষি প্রচণ্ড শর বৈরিদলে ; তবে

এ বারতা, এ অদ্ভুত বারতা, জননি

কোথায় পাইলে তুমি, শীঘ্ৰ কহ দাসে।”

রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী

উত্তরিলা; “হায়! পুত্র, মায়াবী মানব

সীতাপতি ; তব শরে মরিয়া বাঁচিল।

যাও তুমি ত্বরা করি ; রক্ষ রক্ষঃকুল-

মান, এ কালসমরে, রক্ষঃ-চূড়ামণি !

ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী

মেঘনাদ; ফেলাইলা কনক-বলয়

দূরে; পদতলে পড়ি শোভিল কুণ্ডল,

যথা অশোকের ফুল অশোকের তলে

আভাময় ! “ধিক্ মোরে” কহিলা গম্ভীরে

কুমার, “হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে

স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে?

এই কি সাজে আমারে, দশাননাত্মজ

আমি ইন্দ্রজিৎ? আন রথ ত্বরা করি;

ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।”

সাজিলা রথীন্দ্রষভ বীর-আভরণে,

হৈমবতীসুত যথা নাশিতে তারকে

মহাসুর; কিম্বা যথা বৃহন্নলারূপী

কিরীটী, বিরাটপুত্র সহ, উদ্ধারিতে

গোধন, সাজিলা শূর শমীবৃক্ষমূলে।

মেঘবর্ণ রথ; চক্র বিজলীর ছটা;

ধ্বজ ইন্দ্রচাপরূপী;তুরঙ্গম বেগে

আশুগতি। রথে চড়ে বীর-চূড়ামণি

বীরদর্পে, হেন কালে প্রমীলা সুন্দরী,

ধরি পতি-কর-যুগ (হায় রে যেমতি

হেমলতা আলিঙ্গয়ে তরু-কুলেশ্বরে)

কহিলা কাঁদিয়া ধনি; “কোথা প্রাণসখে,

রাখি এ দাসীরে, কহ, চলিলা আপনি?

কেমনে ধরিবে প্রাণ তোমার বিরহে

এ অভাগী? হায়, নাথ, গহন কাননে,

ব্রততী বাঁধিলে সাধে করি-পদ, যদি

তার রঙ্গরসে মনঃ না দিয়া, মাতঙ্গ

যায় চলি, তবু তারে রাখে পদাশ্রয়ে

যূথনাথ। তবে কেন তুমি, গুণনিধি,

ত্যজ কিঙ্করীরে আজি?” হাসি উত্তরিলা

মেঘনাদ, “ইন্দ্ৰজিতে জিতি তুমি, সতি,

বেঁধেছ যে দৃঢ় বাঁধে, কে পারে খুলিতে

সে বাঁধে? ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া

কল্যাণি, সমরে নাশি, তোমার কল্যাণে

রাঘবে। বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখি।”

উঠিল পবন-পথে ঘোরতর রবে,

রথবর, হৈমপাখা বিস্তারিয়া যেন

উড়িলা মৈনাক-শৈল অম্বর উজলি!

শিঞ্জিনী আকর্ষি রোষে, টঙ্কারিলা ধনুঃ

বীরেন্দ্র, পক্ষীন্দ্র যথা নাদে মেঘ মাঝে

ভৈরবে। কাঁপিল লঙ্কা, কাঁপিল জলধি !

সাজিছে রাবণ রাজা, বীরমদে মাতি; —

বাজিছে রণ-বাজনা;গরজিছে গজ;

হ্রেষে অশ্ব; হুঙ্কারিছে পদাতিক, রথী;

উড়িছে কৌশিক-ধ্বজ; উঠিছে আকাশে

কাঞ্চন-কঞক-বিভা। হেন কালে তথা,

দ্রুতগতি উতরিলা মেঘনাদ রথী।

নাদিলা কর্পূরদল হেরি বীরবরে

মহাগর্বে। নমি পুত্র পিতার চরণে,

করযোড়ে কহিলা;—“হে রক্ষঃ-কুল-পতি,

শুনেছি, মরিয়া না কি বাঁচিয়াছে পুনঃ

রাঘব ? এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!

কিন্তু অনুমতি দেহ; সমূলে নির্মূল

করিব পামরে আজি! ঘোর শরানলে

করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে;

নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে।”

আলিঙ্গি কুমারে, চুম্বি শিরঃ, মৃদুস্বরে

উত্তর করিলা তবে স্বর্ণ-লঙ্কাপতি;

“রাক্ষস-কুল-শেখর তুমি, বৎস; তুমি

রাক্ষস-কুল- ভরসা। এ কাল সমরে,

নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা

বারম্বার। হায়, বিধি বাম মম প্রতি ।

কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে,

কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে?”

উত্তরিলা বীরদর্পে অসুরারি-রিপু;-

“কি ছার সে নর, তারে ডরাও আপনি,

রাজেন্দ্র? থাকিতে দাস, যদি যাও রণে

তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।

হাসিবে মেঘবাহন; রুষিবেন দেব

অগ্নি। দুই বার আমি হারানু রাঘবে;

আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে;

দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে!”

কহিলা রাক্ষসপতি; — “কুম্ভকর্ণ, বলী

ভাই মম, — তায় আমি জাগানু অকালে

ভয়ে; হায়, দেহ তার, দেখ, সিন্ধু-তীরে

ভূপতিত, গিরিশৃঙ্গ কিম্বা তরু যথা

বজ্রাঘাতে! তবে যদি একান্ত সমরে

ইচ্ছা তব, বৎস, আগে পূজ ইষ্টদেবে,—

নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর, বীরমণি!

সেনাপতি পদে আমি বরিণু তোমারে।

দেখ, অস্তাচলগামী দিননাথ এবে;

প্রভাতে যুঝিও, বৎস, রাঘবের সাথে।”

এতেক কহিয়া রাজা, যথাবিধি লয়ে

গঙ্গোদক, অভিষেক করিলা কুমারে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.