রাজশেখর বসুর জীবনী| Biography of Rajshekhar Basu in Bengali.
রাজশেখর বসুর জীবনী| Biography of Rajshekhar Basu in Bengali
নাম (Name): | রাজশেখর বসু| Rajshekhar Basu |
জন্ম (Birthday): | ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ (মতান্তরে ১৮ মার্চ) রাজশেখর বসুর জন্ম হয়। |
জন্মস্থান (BirthPlace): | দ্বিতীয় বর্ধমান জেলার বামুনপাড়া গ্রামে মাতুলালয়ে| |
ছদ্দনাম (Pseudonym): | পরশুরাম| |
অভিভাবক (Guardian) / পিতা ও মাতা: | পিতা-চন্দ্রশেখর বসু এবং মাতা- লক্ষ্মীমণি দেবী |
দাম্পত্যসঙ্গী (Spouse): | মৃণালিনী দেবী। |
পেশা (Career): | কবি,গল্পকার, নাট্যকার| |
সম্মান ও স্বীকৃতি: | রবীন্দ্র পুরুস্কা, ‘অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। |
মৃত্যু (Death): | ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল| |
মৃত্যুস্থান: | দ্বিতীয়বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং ঘুমন্ত অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়। |
রাজশেখর বসুর জীবনী| Rajshekhar Basu Biography in Bengali
রাজশেখর বসুর জন্ম ও বংশকথা: ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ (মতান্তরে ১৮ মার্চ) রাজশেখর বসুর জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন দ্বারভাঙা রাজ এস্টেটের ম্যানেজার, দার্শনিক ও পণ্ডিত চন্দ্রশেখর বসু এবং মাতা লক্ষ্মীমণি দেবী পিতা-মাতার ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় বর্ধমান জেলার বামুনপাড়া গ্রামে মাতুলালয়ে রাজশেখর বসু জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার আদি নিবাস ছিল নদীয়া জেলার বীরনগর গ্রামে। রাজশেখরের শৈশব কাটে দ্বারভাঙায় এ কারণে শুরুতে বাংলা ভাষার তুলনায় তিনি হিন্দি ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
রাজশেখর বসুর শৈশব ও শিক্ষা| Rajasekhara Basu's childhood and education.
রাজশেখর বসু ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বারভাঙা রাজ স্কুল থেকে এনট্রান্স পাস করেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি পাটনা কলেজ থেকে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং ভরতি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে।১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স-সহ বিএ পাস করেন তখনও এমএসসি কোর্স চালু হয়নি। ফলে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে রসায়নে এমএ পরীক্ষা দেন ও প্রথম স্থান অধিকার করেন।
রাজশেখর বসুর পারিবারিক জীবন| Rajshekhar Basu's family life.
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তাঁর বিবাহ হয়। পাত্রী বিখ্যাত শ্যামাচরণ দে-র পৌত্রী মৃণালিনী দেবী। তাদের এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। পরবর্তীতে তার বিবাহও হয়। কিন্তু তাঁর মেয়ে-জামাই খুবই অল্পবয়সে অসুস্থতার কারণে মারা যায়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর স্ত্রীও বিগত হন। এই নিদারুণ দুঃখ্যন্ত্রণা, বিয়ােগব্যথা নিয়ে রাজশেখর বসু (ছদ্মনাম: পরশুরাম) দীর্ঘকাল তাঁর সৃষ্টিকর্ম চালিয়ে যান। তবে ব্যক্তিগত এইসব পার্থিব দুঃখ-দুর্দশার কথা তাঁর লেখায় কখনও প্রত্যক্ষরূপে আসেনি।
রাজশেখর বসুর কর্মজীবন| Rajshekhar Basu's career.
১৯০২ খ্রিস্টাব্দে রাজশেখর বসু রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে বিএল পাস করেন, তারপর ওকালতি ব্যাবসাও শুরু করেন, কিন্তু তা চলে মাত্র তিন দিন তিনি আইন ব্যাবসার তুলনায় বিজ্ঞানচর্চাতেই অধিকতর সাফল্য পান এরপর বিজ্ঞানাচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয় এবং ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে সদ্য প্রতিষ্ঠিত‘বেঙ্গাল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’ কোম্পানিতে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর চাকুরিজীবন শুরু করেন। একজন রসায়নবিদ হিসেবে সামান্য বেতনে চাকুরিতে প্রবেশ করে কার্তিক বসুর প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন নিজের দক্ষতায় তিনি পরিচালক পদে উন্নীত হন কমে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্ট, ও, একদিকে গবেষণা আর অন্যদিকে ব্যাবসা পরিচালনা উভয়দিকেই রাজশেখর অসাধারণ দক্ষতার পরিচয়, দিয়েছিলেন কেমিস্ট্রি ও ফিজিয়ােলজির মধ্যে যােগসূত্র। স্থাপন করে তিনি এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
স্বাস্থ্যহানির কারণে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি চাকরি অবসর নেন, তবে আমৃত্যু উপদেষ্টা ও ডিরেক্টর রূপে এ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও সুশৃঙ্খল অভ্যাসের জন্য তাঁর জীবনযাত্রা কিংবদন্তিতে পরিণত। হয়েছিল ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হতে রাজশেখর বসু তাতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। এককথায় তিনি কর্মক্ষেত্রের ভিন্ন ভিন্ন দিকের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন আর সেইসূত্রে সংগৃহীত নানারকম অভিজ্ঞতা সাহিত্যজীবনকেও প্রভাবিত করে।
রাজশেখর বসুর সাহিত্যে প্রবেশ| Literature of Rajshekhar Basu.
“সকালে হঠাৎ ঘুম ভাঙিয়া যদি দ্বারের কাছে দেখি একটা উইয়ের ঢিবি, আশ্চর্য ঠেকে না। কিন্তু যদি দেখি মস্ত একটা বটগাছ তবে সেটাকে কী ঠাওরাইব ভাবিয়া ওঠা যায় না।” গ্রন্থকাররূপে প্রথম প্রকাশেই রাজশেখর বসু যে চমক সৃষ্টি করেন সে বিষয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উক্ত কথাটি বলেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন—“এমন একখানি বই হাতে আসিলে মনে হয় লেখকের সঙ্গে দীর্ঘকালের পরিচয় থাকা উচিত ছিল।
”রাজশেখর বসু বাংলা রম্যরচনার অদ্বিতীয় স্রষ্টা, বিজ্ঞানের ছাত্র ও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সফল কর্ণধার। তিনি একাধারে রম্যরচনাকার, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও রসায়নবিদ একটু বেশি বয়সে সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ করে নিজস্ব ঢঙে রাজশেখর বসু স্বনামে ও ‘পরশুরাম’ ছদ্মনামে আপন প্রতিভার পরিচয় রেখে গিয়েছেন রাজশেখর বসু সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তখন তাঁর বয়স বিয়াল্লিশ বছর। তাঁর প্রথম গল্প 'শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড, যা ভারতবর্ষ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ও ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে গড্ডলিকা গল্পগ্রন্থে সংকলিত হয় শনিবারের চিঠি পত্রিকাতেও তিনি নিয়মিত লিখেছেন। পরবর্তী বাকি পঁয়ত্রিশ বছর ধরে তিনি সাহিত্যসাধনা ও মননশীল প্রবন্ধ রচনা করে গিয়েছেন সঙ্গে চলেছে অনুবাদকর্ম ও ‘চলন্তিকা’ অভিধান সংকলনের কাজ।
রাজশেখর বসুর সাহিত্যসম্ভার| Literary collection of Rajshekhar Basu.
রম্যরচনাকার হিসেবে বিখ্যাত পরশুরাম গল্পরচনার পাশাপাশি প্রবন্ধ, অনুবাদ এমনকি অভিধান রচনার কাজও করেছেন। বহুমুখী সাহিত্যরচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত।
তাঁর গ্রন্থগুলির মধ্যে গল্পগ্রন্থ—“গড্ডলিকা’, ‘কঞ্জলী', হনুমানের স্বপ্ন ইত্যাদি গল্প উল্লেখযােগ্য হল:- ‘গল্পকল্প, ধুস্তুরীমায়া ইত্যাদি গল্প’, ‘কৃষকলি ইত্যাদি গল্প’, ‘নীলতারা ইত্যাদি গল্প’, ‘আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প’, ‘চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প, প্রবন্ধ গ্রন্থ—“লঘুগুরু’, ‘বিচিন্তা’, ‘কুটির শিল্প’, ‘ভারতের খনিজ ইত্যাদি।
অনুবাদ গ্রন্থ—“বাল্মীকি রামায়ণ’, ‘মহাভারত’, ‘মেঘদূত, ‘হিতােপদেশের গল্প’ ইত্যাদি। তিনি রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমদ্ভগবতগীতা'-র সারানুবাদ করেছিলেন।
গ্রন্থগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এ ছাড়া পরশুরামের উল্লেখযােগ্য কীর্তি—তিনি অভিধান গ্রন্থ সংকলন করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই অভিধান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জগতে দিকচিহ্নস্বরূপ পরশুরাম বেশ কিছু কাব্য-কবিতাও লেখেন।
কবিতার মধ্যে উল্লেখযােগ্য—‘জল’, ‘নাবিক’, ‘সরস্বতী’, ‘প্রার্থনা’, ‘দেবনির্মাণ, দুলালের গল্প’, ‘ঘাস’, ‘বনফুল’, ‘জামাইবাবু ও বউমা ইত্যাদি এগুলির বেশিরভাগই রম্যকবিতা।
রাজশেখর বসুর সম্মান ও স্বীকৃতি| Respect and recognition of Rajshekhar Basu.
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত বানান-সংস্কার সমিতি ও ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ প্রকারের পরিভাষা সংসদে রাজশেখর বসু সভাপতিত্ব করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘কৃষ্ণকলি ইত্যাদি গল্প’-গল্পগ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে রবীন্দ্র পুরুস্কারে ভূষিত করে। ‘আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প’-এর জন্য তিনি ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৫৭-১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে তিনি ডিলিট উপাধিতে ভূষিত হন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার কর্তৃক তিনি ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত হন। এ ছাড়া ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘সরােজিনী পদকে ভূষিত হন। বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় রাজশেখর বসুর দুটি গল্পকে চলচ্চিত্র-রূপ দেন। প্রথমটি রাজশেখরের ‘পরশপাথর' গল্প অবলম্বনে সমনামাঙ্কিত ছায়াছবি এবং ও দ্বিতীয়টি বিরিঞ্জুিবাবা’ অবলম্বনে ‘মহাপুরুষ’ নামে একটি চলচ্চিত্র তিনি পরিচালনা করেন।
রাজশেখর বসুর শেষ জীবন| The last life of Rajshekhar Basu.
১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পরেও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যান অবশেষে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল দ্বিতীয়বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং ঘুমন্ত অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়।
[আরো পড়ুন ]
- Biography of Michael Madhusudan Dutt|
- সত্যেন্দ্র নাথ বসুর জীবনী|
- শঙ্খ ঘােষের জীবনী | Biography of Shankha Ghosh
- Swami Vivekananda Biography.
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনী.
- প্রেমেন্দ্র মিত্র-র জীবনী.
- উচ্চ মাধ্যমিক শেষ সময়ের সাজেশন 2022.
- আমাজনে আগুন লাগার কারণ | Amazon Forest Fire.
- পাবলো নেরুদার জীবনী|Biography of Pablo Neruda.
- গৌতম বুদ্ধের জীবনী|Biography of Gautam Buddha.
- জয় গোস্বামীর জীবনী| Biography of Joy Goswami.
- সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জীবনী|Biography of Syed Mustafa Siraj.
- জীবনানন্দ দাশের জীবনী| Biography of Jibanananda Das.
- শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী| Biography of Shakti Chattopadhyay.
- রাজশেখর বসুর জীবনী| Biography of Rajshekhar Basu in Bengali
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....